রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বুধবার ক্রেমলিন জানিয়েছে যে, ইউক্রেন শান্তি আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা বলেছেন, কিয়েভ রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত, তবে মস্কোকে যথেষ্ট নিষ্ঠা দেখাতে হবে।
কুলেবার মন্তব্য সম্পর্কে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘বার্তাটির সঙ্গে আমাদের অবস্থানের মিল রয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত পরিষ্কার করে বলতে হবে।’
পেসকভ বলেন, রাশিয়া কখনো আলোচনার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেনি। আলোচনা প্রক্রিয়ার জন্য সব সময় উন্মুক্ত থেকেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিস্তারিত জানাটা গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে রাশিয়ার সেই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ইউক্রেনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাখ্যান করেছিল। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে যুদ্ধ থামাতে প্রস্তুত পুতিন।
কিন্তু কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্ররা যদি এতে সাড়া না দেয়, তবে যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন তিনি। গত মাসে পুতিন যুদ্ধ বন্ধে তার শর্তগুলো উল্লেখ করেন। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না ইউক্রেন এবং যুদ্ধে যে চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেগুলো থেকে কিয়েভকে সেনা সরাতে হবে। তবে রাশিয়ার এসব শর্ত প্রত্যাখ্যান করে কিয়েভে জানায়, এসব শর্ত মানা আত্মসমর্পণের শামিল।
এদিকে, খারকিভে রুশ বিমান হামলায় একজন নিহত এবং একটি ভবনে আগুন ধরে গেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ইউক্রেনকে সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন, এবং তার প্রশাসন ইউক্রেনকে বড় ধরনের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ৫০ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দিয়েছে।
সত্যিই কি ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে চান পুতিন?
দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। এখনও থামেনি সেই যুদ্ধ। এবার কি বন্ধ হবে সেই রক্তক্ষয়ী লড়াই?
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইঙ্গিতের পর এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের কাছে তেমনই দাবি করেছে চারটি রুশ সূত্র। তবে পুতিন নাকি বলেছেন, কিয়েভ বা পশ্চিমা দুনিয়া যদি তার প্রস্তাবে কোনও প্রতিক্রিয়া না জানায় তাহলে অবশ্য তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন।
বাণিজ্যিক বা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পুতিনের সাথে কাজ করেছেন বা করছেন, এমন অন্তত পাঁচজন এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন। তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক তারা।
এদিকে পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভও এই বিষয়ে মুখ খুলতে গিয়ে জানিয়েছেন, তারা ‘অনন্ত যুদ্ধ’ চান না। তাই যুদ্ধবিরতি-সংক্রান্ত আলোচনা চালাতে আপত্তি নেই তাদের।
কিন্তু এতদিন পরে কেন পুতিন যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে মুখ খুলছেন? এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের মত, গত মার্চে সদ্য নতুন করে ক্ষমতায় ফিরেছেন তিনি। তার হয়তো মনে হয়েছে, এই যুদ্ধ থেকে ক্ষমতায় টিকে থাকা অর্থাৎ রাজনৈতিক ক্ষমতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে যথেষ্ট লাভবান হয়ে গিয়েছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে এই যুদ্ধ বন্ধ হলেও তার কোনও ক্ষতি হবে না। তাছাড়া ক্ষমতা ধরে রাখলেও ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তার জনপ্রিয়তায় যে ভাটার টান, সে তথ্যও দিব্যি জানেন পুতিন। এই পরিস্থিতিতে তাই একগুঁয়ের মতো যুদ্ধ না করে বরং আলোচনায় যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছেন তিনি। ঠিকমতো যেপথে এগোলে হয়তো যুদ্ধবিরতির পথে হাঁটা সম্ভব হবে। তবে এখনও পুরো বিষয়টিই প্রায় জল্পনার স্তরে রয়েছে। তাই যুদ্ধবিরতি বা সেই সংক্রান্ত আলোচনা এখনও কুয়াশাচ্ছন্নই বলা যায়।
উল্লেখ্য, এই যুদ্ধে ইউক্রেনের মতো রাশিয়াকেও ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। রণক্ষেত্রে অস্ত্রের জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে মস্কো। অপর্যাপ্ত উৎপাদনের কারণে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের জন্য বিকল্প উৎস খোঁজা হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথ নয়। যদিও খারকিভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনও চলছে তীব্র হামলা। এই অবস্থায় সত্যিই কি যুদ্ধবিরতি হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকের।
সূত্র: রয়টার্স
আপনার মন্তব্য লিখুন