ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় রক্তপাত বন্ধে তুরস্কের দায়িত্ব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রবিবার তুরস্কের কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী প্রদেশ রিজে বক্তৃতাকালে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন নিয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, গাজায় রক্তপাত বন্ধ করা তুরস্কের দায়িত্ব। তার ভাষায়, “ইসরায়েলের নিপীড়ন থেকে ফিলিস্তিনিদের বাঁচানোর দায়বদ্ধতা রয়েছে তুরস্কের।”
তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখের সামনেই গাজায় যে রক্তপাত হচ্ছে তা বন্ধ করা আমাদের দায়িত্ব।”
ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য তুরস্কের প্রচেষ্টা সম্পর্কে এরদোয়ান বলেন, “বর্তমানে যা কিছু দৃশ্যমান আমরা তার চেয়ে বেশি করছি এবং সেটি চালিয়ে যাব।”
তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, তুরস্ক কখনোই গাজার ভাই ও বোনদের পরিত্যাগ করবে না। তার ভাষায়, “(গাজায়) এই অনৈতিক, নীতিহীন, ঘৃণ্য গণহত্যাকে সমর্থনকারীদের অপরাধের বিরুদ্ধে সরব হওয়াটা আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব।”
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, “যে খুনিরা পুরো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডজুড়ে শিশু, মা এবং নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, সেইসাথে নিপীড়িতদের সম্পত্তি লুণ্ঠন করছে, সেইসব চোরদের খুঁজে বের করা আমাদের মানবিক দায়িত্ব।”
তিনি আরো বলেন, “এছাড়াও এই অনৈতিক, হৃদয়হীন এবং ঘৃণ্য গণহত্যার মতো অপরাধের সমর্থনকারীদের যেখানেই আমরা মুখোমুখি হবো সেখানেই তাদের অপরাধগুলোকে চিহ্নিত করে দেওয়াও আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব।”
তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, “জেরুজালেমের হারাম আল-শরিফের- যার মধ্যে আমাদের প্রথম কিবলা আল-আকসা মসজিদও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে- পবিত্রতা রক্ষা করা আমাদের আধ্যাত্মিক বাধ্যবাধকতা। তবে সেটি এমনভাবে করতে হবে যাতে অন্যান্য ধর্মের সদস্যদের অধিকারকে সম্মান করা হয়।”
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি
হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলি নিহত
লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ট্যাংক বিধ্বংসী গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে একজন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।
রবিবার শেষ বেলায় ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় কিব্বুজ ইফতাহ গ্রামের কাছে ওই হামলা হয় বলে ইসরায়েল সেনাবাহিনীর আরবিভাষী মুখপাত্র লে. কর্নেল অ্যাভিচাই অ্যাডরায়ি জানিয়েছেন।
হিজবুল্লাহ ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে বলেছে, সংগঠনটি একটি ইসরায়েলি সেনাদলকে লক্ষ্য করে হামলাটি চালিয়েছে। তবে, অ্যাডরায়ি দাবি করেছেন, নিহত ইসরায়েলি একজন বেসামরিক নাগিরক।
হিজবুল্লাহ মহাসচিব সাইয়্যেদ নাসরুল্লাহ অবশ্য গত শুক্রবার তার বহুল প্রত্যাশিত ভাষণে বলেছিলেন, ইসরায়েল যদি লেবাননের একজন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে তবে ইসরায়েলেরও একজন বেসামরিক নাগরিককে প্রাণ হারাতে হবে। এ পর্যন্ত দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
অ্যাডরায়ি একটি এক্স পোস্টে বলেছেন, “হিজবুল্লাহ ইসরায়ৈলি সামরিক স্থাপনা ও বেসামরিক শহরগুলো লক্ষ্য করে নিরবচ্ছিন্নভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে; তারা বেসামরিক নাগরিক ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে কোনো পার্থক্য করছে না। তাদের একটি হামলায় একজন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।” ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, তারা ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার উৎসস্থলে পাল্টা হামলা চালিয়েছে।
এদিকে রবিবার সন্ধ্যায় লেবাননের হিজবুল্লাহর নিক্ষিপ্ত একটি রকেট ইসরায়েলের কিরিয়া শিমোনা এলাকায় আঘাত হানলে একটি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে গাড়িটিকে ভস্মীভূত হতে দেখা গেলেও ইসরায়েল দাবি করেছে, এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
ওই গাড়িতে হামলার পর লেবানন থেকে নিক্ষিপ্ত আরো কিছু রকেট কিরিয়াত শিমোনা শহরে আঘাত হানে। শহরের মিউনিসিপালিটি জানিয়েছে, এসব রকেটের আঘাতে ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হলেও কেউ হতাহত হয়নি। সম্প্রতি ওই এলাকায় হিজবুল্লাহর হামলা বেড়ে গেলে কিরিয়াত শিমোনা এবং তার আশপাশের বহু গ্রাম ও শহর থেকে হাজার হাজার ইসরায়েলিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে তেল আবিব।
হিজবুল্লাহ রবিবার রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের একটি বিমান হামলার জবাবে এসব রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। একটি বেসামরিক গাড়িতে চালানো ওই বিমান হামলায় লেবাননের একজন নারী ও তার তিন সন্তান নিহত হয়।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল
জেরুজালেমে ছুরিকাঘাতে ইসরায়েলি বাহিনীর দুই কর্মকর্তা আহত
সোমবার সকালে জেরুজালেমের পুরাতন শহরের হেরোদের গেটের পাশে ছুরিকাঘাতের এই ঘটনা ঘটে। হামলাকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
খবর অনুসারে, হামলায় ইসরায়েলি সীমান্ত পুলিশের দুই কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ২০ বছর বয়সী একজন পুরুষ ও এক নারী রয়েছেন। একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের জেরুজালেমের হাদাসা মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারী ওই কর্মকর্তাদের ছুরিকাঘাত করলেও ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডোমের জরুরি সেবা বিভাগ জানিয়েছে, তারা দুজনগুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
গাজা পরিস্থিতি নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসছে নিরাপত্তা পরিষদ
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীনের অনুরোধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
বৈঠকে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে একটি নতুন প্রস্তাব গ্রহণের বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদ বিবেচনায় নিতে পারে বলে জানা গেছে।
নতুন প্রস্তাবটির উদ্যোক্তা নিরাপত্তা পরিষদের নির্বাচিত ১০ সদস্য।
যুদ্ধবিরতি বা মানবিক বিরতির আহ্বান জানিয়ে আনা চারটি প্রস্তাব ইতোমধ্যে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের ভেটোর কারণে ভেস্তে গেছে।
নিরাপত্তা পরিষদ শেষ দুটি প্রস্তাব পাসে ব্যর্থ হওয়ার পর ১০ দিনের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আকস্মিকভাবে নজিরবিহীন অভিযান পরিচালনা করে। এরপর ইসরায়েল তার বর্বর যুদ্ধ মেশিন চালু করে। সেদিন থেকে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দখলদার সেনাদের পাশবিক হামলায় ৪,০০৮ শিশু ও ২,৫৫০ নারীসহ ৯,৭৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
গাজার ২৩ লাখ অধিবাসীর জ্বালানি, বিদ্যুৎ, খাদ্য ও খাবার পানির সরবরাহ লাইন বন্ধ করে দিয়েছে তেল আবিব। ইসরায়েল গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার পর ইরাক ও সিরিয়ায় অবস্থিত মার্কিন সেনা ঘাঁটিগুলোর ওপর প্রতিরোধ যোদ্ধারা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইসরায়েলের হামলায় গাজায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা। তবে ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে। যুদ্ধবিরতির প্রশ্নে ইসরায়েলের পক্ষেই সাফাই গাইছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকা সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে, তারা পূর্ণ যুদ্ধবিরতি চায় না।
সূত্র: আল জাজিরা
আপনার মন্তব্য লিখুন