শিশু-কিশোরদের মাঝেও দেখা দিচ্ছে ডায়াবেটিস । WB – Bengali Online News Portal in Bangladesh
বিশ্ববার্তা
  • হোম
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব সংবাদ
  • বিনোদন
  • খেলাধুলা
  • ক্যাম্পাস
  • চাকুরী বার্তা
  • অন্যান্য খবর
    • স্বাস্থ্য বার্তা
    • ধর্ম বার্তা
    • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • কলাম
পাওয়া যায়নি
সকল অনুসন্ধানি তথ্য
  • হোম
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব সংবাদ
  • বিনোদন
  • খেলাধুলা
  • ক্যাম্পাস
  • চাকুরী বার্তা
  • অন্যান্য খবর
    • স্বাস্থ্য বার্তা
    • ধর্ম বার্তা
    • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • কলাম
পাওয়া যায়নি
সকল অনুসন্ধানি তথ্য
বিশ্ববার্তা
  • বিশ্ববার্তা টিভি
  • যোগাযোগ

শিশু-কিশোরদের মাঝেও দেখা দিচ্ছে ডায়াবেটিস । WB

বিশ্ববার্তা ডেস্ক
ক্যাটাগরি স্বাস্থ্য বার্তা
শিশু-কিশোরদের মাঝেও দেখা দিচ্ছে ডায়াবেটিস । WB
8
শেয়ার করুন
শেয়ার করুনশেয়ার করুন

বাবুল আখতার। ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ছয় বছর বয়সী শিশু সন্তানকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছেন রাজধানীর শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে।

হাসপাতালেই কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘করোনার দুই বছর কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি বৌ-বাচ্চাসহ। আমি অফিসের কাজে নানা সময় বের হলেও ওরা বাসাতেই ছিল প্রায় সময়। রান্নাবান্নার পাশাপাশি আমার স্ত্রী মূলত বাচ্চার দেখাশোনা করতো। কিন্তু একা হওয়ার কারণে বাচ্চাকে সব সময় শান্ত রাখা যেত না। এছাড়া খাওয়ানোর সময় বাচ্চাকে মোবাইল দিতেই হতো।’

তিনি বলতে থাকেন, ‘গত বছর বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করাই। কিন্তু অনলাইনে ক্লাস চালু থাকলেও এই পদ্ধতিতে খুব একটা বেশি পড়াশোনা হতো বলে মনে হয় না। এ বছর স্কুল খোলার পরে বাচ্চা প্রতিদিন স্কুলে গেলেও বাসায় ফিরে মোবাইলে গেমস খেলাটাই সে বেশি প্রাধান্য দিত। স্কুলে যাওয়া ও আসার সময় কোল্ড ড্রিংক্স এবং বার্গার খাওয়ার শখ করে বাচ্চা। আর তাই ওর মাও কিনে দিতো। কিন্তু গত কয়েক মাসে হঠাৎ করে ওর শরীরের ওজন বাড়তে থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু দিন যাবৎ ঘন ঘন প্রস্রাব করছিল বাচ্চাটা। প্রতিবেশী একজন বলছিলেন এটা স্বাভাবিক বিষয়। বাচ্চা পানি বেশি খেলে এমনটা হতে পারে। এটা শুনে আমার স্ত্রী অত বেশি গুরুত্ব দেয়নি বিষয়টা। তবে গতকাল রাতে হঠাৎ করেই ওর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। স্থানীয় একটা ক্লিনিকে নিলে তারা বলে ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এখানে এসে আজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে জানতে পারলাম বাচ্চা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।’

দেশে দীর্ঘ সময়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানারকম প্রভাব ফেলেছে শিশু-কিশোরদের জীবনে। একদিকে মোবাইল ও ডিভাইসের প্রতি আসক্তি যেমন বেড়েছে, ঠিক একইভাবে তার প্রভাবে বেড়েছে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যাও।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ রাজধানীর অনেক স্থানেই মাঠের অভাবে শিশু-কিশোরদের বিশাল একটা অংশ ঘরে মোবাইল ও ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমেই সময় কাটাচ্ছে। ফলে অপর্যাপ্ত ব্যয়াম, শরীরচর্চার অভাবে শিশু-কিশোররা দ্রুতই মুটিয়ে যাচ্ছে।

একইভাবে শিশু-কিশোরদের মাঝে অনেকেই স্থুলতায় ভুগছে, যাদের মাঝে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়া ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মাঝেও নানা কারণে বাড়ছে টাইপ-১ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা।

আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ) তথ্য মতে, দেশের প্রায় ১৮ হাজার শিশু-কিশোর ডায়াবেটিসে ভুগছে। এর মাঝে ৮২ শতাংশ টাইপ-১ এবং ১৮ শতাংশ টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বিশেষ করে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি পর বেড়েছে এই সংখ্যা। শুধুমাত্র রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে আট হাজারের বেশি শিশুর ডায়াবেটিস আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতি বছরই গড়ে চার শ থেকে পাঁচ শ করে রোগী বাড়ছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটাই প্রকৃত চিত্র নয়। যেহেতু আমাদের দেশে এখনো ডায়াবেটিস রোগ শনাক্তে প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং পর্যাপ্ত হয় না তাই সংখ্যা দিয়ে আসলে পরিস্থিতি বোঝানো যাবে না।

এ কারণে অনেকেই আসলে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারে না। রাজধানীসহ দেশের অনেক স্থানেই এখন শিশু-কিশোররা মাঠের অভাবে খেলাধূলায় সম্পৃক্ত হতে পারে না। শারীরিক পরিশ্রমের কোনো সুযোগ থাকে না তাদের। আর তাই কোভিড-১৯ সংক্রমণের সময় ঘরে থেকে মোবাইল বা অন্যান্য ডিভাইস ব্যবহারের যে অভ্যাস হয়েছে তা থেকে এখনো বের হতে পারেনি শিশু-কিশোরদের অনেকেই। এক্ষেত্রে তাদের ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ক্রিনিংয়ের আওতায় সময় মতো আসতে না পারার কারণে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে চোখ, কিডনি, রক্তচাপ, স্নায়ুজনিত জটিলতায় ভুগতে হয় শিশু-কিশোরদের। এক বছর বা এর চেয়ে কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রেও দেখা যায় দেরিতে ডায়াবেটিস শনাক্ত হওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে শিশু মারা যাওয়ার পরিস্থিতিও তৈরি হচ্ছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ মহামারি নিয়ন্ত্রণে দেওয়া সাধারণ ছুটির সময়ে বাসায় যে সব শিশু-কিশোরদের শুয়ে-বসে, টিভি দেখে, মোবাইল বা কম্পিউটার গেমস খেলে সময় কাটানোর অভ্যাস হয়ে গেছে তাদের মাঠে খেলাধুলার দিকে আকৃষ্ট করতে হবে।

এমন অবস্থায় অভিভাবকদের সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। যদি বাবা-মা দুইজনের কারও মাঝে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে সন্তানকেও স্ক্রিনিংয়ে আওতায় আনা প্রয়োজন। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরও সচেতন হতে হবে। একইসঙ্গে সময় মতো লক্ষণ দেখা মাত্র সবাইকে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

শিশু-কিশোরদের কত ধরনের ডায়াবেটিস হয়

১. নবজাতক বা নিওনেটাল ডায়াবেটিস: এ ধরনের ডায়াবেটিস সাধারণত জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে হয়, যা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট জেনেটিক মিউটেশন বা ত্রুটির কারণে হয়। এই ডায়াবেটিস কিছু ক্ষেত্রে সাময়িক হতে পারে, যা বড় হলে ভালো হয়ে যেতে পারে। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটা স্থায়ী রূপ নেয়।

২. বয়ঃসন্ধিকালের ডায়াবেটিস বা মডি: এটা নবজাতক বা নিওনেটাল ডায়াবেটিসের মতো একটি নির্দিষ্ট জেনেটিক মিউটেশন বা ত্রুটির কারণে হয়। এটা বয়ঃসন্ধিকালের শুরুতে হয়। এ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের সাধারণত পরিবারের তিন জেনারেশনে এ ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকে। নবজাতক ডায়াবেটিস ও বয়ঃসন্ধিকালের ডায়াবেটিসকে একত্রে মনোজেনিক ডায়াবেটিস বলে।

৩. টাইপ-১ বা জুভেনাইল ডায়াবেটিস: শিশুদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি হয় এ ধরনের ডায়াবেটিস। তবে বড়দেরও হতে পারে। অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন তৈরি প্রায় সম্পূর্ণভাবে অথবা পুরোপুরি ব্যাহত হওয়ার কারণে এ ধরনের ডায়াবেটিস হয়। আমাদের দেশে এ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রায় ১৭ হাজার মানুষ। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

৪. টাইপ-২ ডায়াবেটিস: শরীরে ইনসুলিন উৎপন্ন হওয়া সত্ত্বেও তা রেসিস্ট্যান্সের জন্য কোষে কাজ করতে না পারার কারণে এ ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। এ ধরনের ডায়াবেটিস সাধারণত বড়দের বেশি হয় এবং বিশ্বব্যাপী এ ডায়াবেটিসের হার সবচেয়ে বেশি। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ডায়াবেটিস আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় এর বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। শিশুদের ডায়াবেটিস হলে বড়দের তুলনায় জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

শিশু-কিশোরদের ডায়াবেটিসের লক্ষণ কী

এ রোগের অন্যতম লক্ষণ হলো বেশি বেশি ক্ষুধা লাগা, অতিরিক্ত পিপাসা, ঘন ঘন প্রস্রাব, শিশুর শারীরিক বৃদ্ধিতে সমস্যা, ওজন হ্রাস পাওয়া, দীর্ঘস্থায়ী ঘা, অস্বাভাবিক ক্লান্তি, শুষ্ক ত্বক, পা অবশ বোধ হওয়া বা ঝিমঝিম করা, মনোযোগ কমে যাওয়া, উৎসাহ-উদ্দীপনা কমে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া, ঘন ঘন বমি, পেটের পীড়া ইত্যাদি।

অনেক সময় বাচ্চাদের ডায়াবেটিসে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না কিংবা মা-বাবা ব্যাপারটি খেয়াল করেন না। তাই বাচ্চাদের একটি বড় অংশ প্রথম অবস্থাতেই খিঁচুনি, পেটব্যথা, পানিশূন্যতা ও অজ্ঞান হয়ে অর্থাৎ কিটো এসিডোসিস নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। উল্লিখিত যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

রাজধানী বারডেম হাসপাতালের শিশু রোগ ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. বেদৌরা জাবীন বলেন, ‘করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। শিশুদের দীর্ঘ দিন কেটেছে ঘরবন্দি। স্বাভাবিক জীবন-যাপন থেকে বঞ্চিত হয়েছে তারা। এতে ওজন বাড়ার পাশাপাশি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে অনেকে।’

রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সমন্বয়ক ও শিক্ষক লিরা ইসলাম বলেন, ‘মোবাইল ও অন্যান্য ডিভাইসের প্রতি আসক্তি বেশি দেখা যায় উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরীদের মাঝে। স্কুল টাইমে পড়াশোনার চেয়ে তারা বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন গেমস নিয়ে আলোচনা করছে।’

তিনি বলেন, ‘লেজার টাইমে দেখা যায় খেলার মাঠে যায় না অনেকেই। অতিরিক্ত ডিভাইস আসক্তির কারণে অনেকেরই চোখে এখন দূরদৃষ্টির ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে। ডিভাইসে অনেকক্ষণ থাকার কারণে তারা দূরের জিনিস কম দেখতে পাচ্ছে। কোনো কোনো বাচ্চার ব্লিংকিং আইস আসছে, আবার কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে কোনো কারণ ছাড়াই এলার্জেটিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। গার্জিয়ানরা এসে আমাদের জানায়, বাচ্চাদের এখন সেই ডিভাইস থেকে সরাতে বেগ পেতে হচ্ছে। শারীরিকভাবে নানা অসুস্থতার কথাও জানান।’

এম আর খান শিশু হাসপাতালের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর বলেন, ‘কোভিড-১৯ সংক্রমণের সময় দেওয়া সাধারণ ছুটিতে আসলে শিশু-কিশোরদের একটা বিশাল সংখ্যা মোবাইল বা ডিভাইসে আসক্ত হয়ে গেছে। চেম্বারেই শুধু এমন শিশু-কিশোর রোগী না, বরং আমি বাসায়ও দেখছি একই অবস্থা। যে বাচ্চাকে কখনো মোবাইল ধরতে দেওয়া হয় নাই কোভিড-১৯ সংক্রমণকালীন তাকে সেটা দিতে হয়েছে। এখন সে মোবাইলেই বেশি অভ্যস্ত হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘ইদানিং অনেক শিশু-কিশোর স্কুলে যাওয়া/আসার সময় ফার্স্ট ফুডসহ স্ট্রিট ফুডে অভ্যস্ত হচ্ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে শারীরিক পরিশ্রম করা হয় না তাদের। কেউ সুযোগ বা মাঠের অভাবে দেখা গেলো খেলাধূলা থেকে দূরে থেকে মোবাইলে গেমস খেলেই সময় কাটাচ্ছে। এক্ষেত্রে কিন্তু মুটিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর তখন ডায়াবেটিসের আশঙ্কাও বাড়তে থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিশু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে হঠাৎ ওজন কম বা বৃদ্ধি, পিপাসা, অমনোযোগিতা, ভুলে যাওয়া, ঘাড়ের পাশে কালো দাগসহ আরও কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। আর তাই উপসর্গ থাকলে দ্রুতই ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা উচিত।’

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ডা. সিফাত ই সাঈদ বলেন, ‘হাসপাতাল ও চেম্বারে আমরা এখন অনেক শিশুকেই পাচ্ছি যারা কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছে। ডিভাইসের প্রতি আসক্তি ও মাঠে খেলাধূলা থেকে নিজেদের দূরে রাখা শিশু-কিশোরদের মাঝে এখন ডায়াবেটিসসহ নানা রোগ বাড়ছে। কারণ কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে দেওয়া সাধারণ ছুটির সময়ে তাদের মাঝে ডিভাইসের প্রতি একটা আলাদা আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। আর এই ডিভাইসের প্রতি আসক্তি হওয়ার কারণে তারা মাঠে যাচ্ছে না, কোনো ধরণের শারীরিক পরিশ্রমের কিছু করছে না।’

তিনি বলেন, ‘অনেকেরই আবার ওবিসিটি বা শরীরে অতিরিক্ত স্নেহ বা চর্বি জাতীয় পদার্থ জমা হওয়ার কারণে তাদের স্বাস্থ্যের ওপর এর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে। শুধুমাত্র তাই না, তাদের মাঝে ভিটামিন ডি’র অভাবও দেখা যাচ্ছে। কারণ বাইরে গেলে সূর্যের আলোর স্পর্শে আসার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু ডিভাইস নিয়ে তো সে ঘরেই ব্যস্ত থাকছে। দেখা যায় ‘ভিটামিন ডি’র অভাবে শিশু-কিশোরদের একটা বড় অংশ ডিপ্রেসড হয়ে থাকে। তাদের স্বাভাবিক মাত্রার চাইতে কম এনার্জি থাকে।’

বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটির (বিইএস) সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির সময়ের প্রথম দিকে ঘরের বাইরে আসলে তেমন কেউ বের হয়নি। এই সময়ে বিভিন্ন দেশে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে নানা কারণে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আসলে কতজন রোগী বেড়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। কারণ অনেকেই সচেতনতার অভাবে স্ক্রিনিংয়ে আওতায় আসতে চায় না।’

তিনি বলেন, ‘বাচ্চারা করোনাকালে ডিভাইসের প্রতি আসক্ত হয়েছে। কারণ তারা ওই সময় খেলার মাঠ থেকে দূরে ছিল। এটা যেমন এক ধরণের বাস্তবতা, ঠিক তেমনি এখনো রাজধানীতেই দেখা যাবে এমন অনেক স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে নিচতলায় কোনো দোকান আর উপরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ খেলাধূলা বা শারীরিক পরিশ্রমের কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই তারা ডিভাইস বা মোবাইলে গেম খেলতে চাইবে। এমন অবস্থায় অবশ্যই ডায়াবেটিসের শঙ্কা বাড়ে শিশু-কিশোরদের মাঝে।’

সমাধান কী

বাংলাদেশ ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, ‘যদি কোনো শিশুর বারবার পিপাসা ও মূত্রত্যাগ হয় এবং হঠাৎ করেই ওজন কমে যায়, এটি ডায়াবেটিসের লক্ষণ। শিশুর এক বছর বয়সের পর যেকোনো সময়ই এটি ঘটতে পারে এবং এসব ক্ষেত্রে বাবা-মা ও অভিভাবকদের দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’

শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর বলেন, ‘বংশগত জীনের সম্পৃক্ততা থাকলে, পরিবেশগত কারণে শিশুর ডায়াবেটিস হতে পারে। টাইপ-১ ডায়াবেটিসে নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা ও ইনসুলিনের ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে মুখে খাওয়ানোর ওষুধের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। এছাড়া নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা, পরিমিত খাবার এবং পর্যাপ্ত ব্যায়াম বা শারীরিক শ্রম খুবই জরুরি।’

বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটির (বিইএস) সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে কয়েক দফা প্রস্তাবনা দিয়ে বলেছিলাম খেলার মাঠ ছাড়া যেন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তাদের কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেওয়া না হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন কিছু এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এভাবে যদি খেলাধূলার মাঠ সৃষ্ঠি না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা হয় তবে সেটা শিশু-কিশোরদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।’

তিনি বলেন, ‘সরকারিভাবে স্ক্রিনিং পদ্ধতির সুযোগ বাড়ানোর কাজ করা প্রয়োজন। যেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যে কেউ স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আসতে পারে। এ বিষয়ে অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের নন-কমিউনিকেবল বিভাগের কার্যক্রম চলছে। এর পাশাপাশি খেলাধূলার মাঠ ও তাদের শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের সুযোগ করে দেওয়া প্রয়োজন। অভিভাবকদেরও তাদের বাচ্চাকে মোবাইল বা ডিভাইসের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করে খেলার মাঠে পাঠানোর অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন।’

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সিফাত ই সাঈদ বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের শুধুমাত্র পড়ালেখা ও কোচিংয়ে গেলেই হবে না। অভিভাবকদের দায়িত্ব সন্তানদের নিয়ে খেলতে যেতে হবে বা বাইরে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে। এছাড়া সন্তান যেটা পছন্দ করে সেভাবে তাকে কিছু করতে দেওয়াটাও প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাচ্চা যেটা পছন্দ করছে সেটা বাবা-মা করতে দিচ্ছে না। দেখা গেল বাচ্চা ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করছে, কিন্তু বাবা-মা তাকে ভর্তি করে দিলে কোনো একটা কোচিংয়ে। তখন সেটা কিন্তু বাচ্চাকে হতাশ করবে।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগের প্রধান ডা. ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ বলেন, ‘অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি বর্তমানে শিশু-কিশোরদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় মাত্রাতিরিক্ত চাপ দেখা যায়। আবার কোভিড-১৯ লকডাউনের সময়ে শিশু-কিশোরদের মাঝে মোবাইল ও অন্যান্য ডিভাইসের প্রতি আসক্তির পাশাপাশি খেলার মাঠের অভাব ইত্যাদি শিশুদের অতিরিক্ত ওজন বা স্থুলতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায় তাদের।’

শিশুরা যাতে মুটিয়ে না যায়, স্বাভাবিক ওজনের হয়- সেদিকে লক্ষ্য রাখা এবং খেলাধুলা, জগিং, সাঁতার, সাইক্লিংয়ের মতো ব্যায়ামে শিশুদের উৎসাহিত করার ব্যাপারে গুরুত্ব দেন ডা. ইন্দ্রজিৎ।

উৎস : সারাবাংলা
ট্যাগ : পরামর্শবিশ্ববার্তাস্বাস্থ্য পরামর্শ
শেয়ার করুন8শেয়ার করুনসেন্ড
AmraSobai
পূর্ববর্তী পোস্ট

ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে উত্তরবঙ্গের সাথে রেল চলাচল বন্ধ । WB

পরের পোস্ট

মহানবীকে নিয়ে কটূক্তি, আরব বিশ্বে ক্ষোভ। WB

সম্পর্কিত পোষ্ট

খুসখুসে কাশি থেকে মুক্তি পেতে যা করবেন
স্বাস্থ্য বার্তা

খুসখুসে কাশি থেকে মুক্তি পেতে যা করবেন

21/06/2025
হার্ট অ্যাটাকের যে ৬টি লক্ষণ
স্বাস্থ্য বার্তা

হার্ট অ্যাটাকের যে ৬টি লক্ষণ

29/04/2025
রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়, বা জানা দরকার
স্বাস্থ্য বার্তা

রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়, বা জানা দরকার

22/02/2025
গ্যাস্ট্রিক এর ব্যথায় যা করবেন
স্বাস্থ্য বার্তা

গ্যাস্ট্রিক এর ব্যথায় যা করবেন

19/02/2025
আরো দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Worldbartatv
বিজ্ঞাপন

বিশ্ববার্তা

Publisher & Editor H M Bayjid Bustami

Call +8809638387766 +8801991807060
eMail [email protected]
Organization by AmraSobai Foundation

 world_barta_google_news world_barta_youtube world_barta_telegram world_barta_facebook world_barta_twitter

পাওয়া যায়নি
সকল অনুসন্ধানি তথ্য
  • হোম
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব সংবাদ
  • ক্যাম্পাস
  • বিনোদন
  • স্বাস্থ্য বার্তা
  • খেলাধুলা
  • চাকুরী বার্তা
  • ধর্ম বার্তা
  • অন্যান্য খবর

Sponsor by AmraSobai Foundation