ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তাকে হাজির করা হয়।
এ সময় মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। দুপুরেই রিমান্ড বিষয়ে শুনানির কথা রয়েছে।
গত ১১ জুন বিকাল ৪টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর দুই দিন পর তাকে আদালতে হাজির করা হলো।
এর আগে গত ৬ জুন রাতে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়া এলাকা থেকে আটক করে ঢাকায় নিয়ে আসে ডিবির একটি দল। গত ৯ জুন তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এ মামলায় গত ৩ জুন আসামি শিলাস্তি রহমান, ৪ জুন তানভীর ভূঁইয়া এবং ৫ জুন সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
গত ২৪ মে তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন অপর একটি আদালত।
গত ২২ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের বাসায় আমরা সপরিবারে বসবাস করি। গত ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা আনোয়ারুল আজীম আনার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। গত ১১ মে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তা কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাই।
গত ১৩ মে বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপে একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। এতে লেখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি রয়েছে। আমি অমিত সাহার কাজে নিউটাউন যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। আমি পরে ফোন দেব।’ এছাড়া আরও কয়েকটি বার্তা আসে। ক্ষুদে বার্তাগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজ করতে থাকি। কোনো সন্ধান না পেয়ে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস বাদী হয়ে ভারতীয় বারানগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপরও আমরা খোঁজাখুজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে বাবাকে অপহরণ করেছে।
৫ কোটি টাকা চুক্তিতে এমপি আজীমকে হত্যা!
ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। আর এই পরিকল্পনার মূল নায়ক তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়ী পার্টনার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আক্তারুজ্জামান শাহীন। তিনি মূল পরিকল্পনায় হলেও হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয় চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ আমানকে। আমান তার সহযোগীদের নিয়ে কলকাতায় শাহীনের ভাড়া বাসায় হত্যা মিশন সফল করেন। এমপি আনারকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে তার মরদেহ অসংখ্য টুকরো করে ট্রলিব্যাগের মাধ্যমে অন্যত্র সরিয়ে ফেলেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওয়ারী বিভাগ আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে। বুধবার (২২ মে) রাতে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
ডিবি সূত্র জানায়, এরইমধ্যে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া চরমপন্থি নেতা (পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি) আমানসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তারা জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ড সফল করতে শাহীন তাদের সঙ্গে পাঁচ কোটি টাকা চুক্তি করেন। কিলিং মিশন সফল করতে সেই টাকার একটি অংশও পরিশোধ করেছেন তিনি। তবে শাহীন কত টাকা পরিশোধ করেছেন সে বিষয়ে এখনও জানা যায়নি।
এর আগে, বুধবার (২২ মে) দুপুরে এমপি আজীমের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, এমপি আনারকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভারত জড়িত নয়। বাংলাদেশিরাই তাকে খুন করেছে। খুনের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ভারত অত্যান্ত আন্তরিকতার সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা করছে।
এরপর ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড। বিষয়টি নিয়ে আমরা নিবিড়ভাবে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করছি।
কিলিং মিশনের পরিকল্পনা
তদন্তে জড়িত ডিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে অনেক দিন ধরেই এমপি আজীমকে হত্যার পরিকল্পনা করে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আক্তারুজ্জামান শাহীন। শাহীন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের বাসিন্দা ও পৌর মেয়রের ছোট ভাই।
গত ৩০ এপ্রিল আক্তারুজ্জামান শাহীন কলকাতায় যান। তার সঙ্গে নেন চরমপন্থি নেতা আমান ও সিলিস্তা রহমান নামে এক বান্ধবীকে। এর আগেই কলকাতার নিউ টাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেনের একটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট ভাড়া করেন তিনি। সেই ফ্লাটেই ওঠেন তারা। ওই ফ্লাটে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন শাহীনের দুই সহযোগী সিয়াম ও জিহাদ। সেখানে বসে তারা এমপি আনারকে হত্যার চুড়ান্ত পরিকল্পনা করেন।
কিলিং মিশনের পুরো দায়িত্ব আমানকে বুঝিয়ে দিয়ে গত ১০ মে বাংলাদেশে চলে আসেন শাহীন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমান বাংলাদেশ থেকে আরও দুই ভাড়াটে কিলার ফয়সাল শাজী ও মোস্তাফিজকে গত ১১ মে নিয়ে যায় কলকাতায়।
কিলিং মিশন সমাপ্ত
আমানকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এমপি সাহেব ১২ মে কলকাতায় যাবেন চিকিৎসার জন্য। শাহীনও জানার পরই মূলত হত্যার চুড়ান্ত পরিকল্পনা করেন। সেই অনুযায়ী এমপি আনারকে হত্যার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন এবং ওই ফ্লাটে একাধিক চাপাতিও সংগ্রহ করে রাখে তারা।
গত ১২ মে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে কলকাতায় যান এমপি আনার। প্রথম দিন তিনি তার বন্ধু গোপালের বাসায় থাকেন। পরদিন ১৩ মে কৌশলে এমপি আনারকে নিউ টাউনের ওই ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে যায় হত্যাকারীরা।
বিকেলের দিকে এমপি আনার সঞ্জিভা গার্ডেনের ওই ফ্ল্যাটে যান। এরপর আমান তার সহযোগী ফয়সাল, মোস্তাফিজ, সিয়াম ও জিহাদ মিলে এমপিকে চাপাতির মুখে জিম্মি করে। এ সময় এমপির কাছে শাহীনের পাওনা টাকা পরিশোধের কথাও বলে তারা। বিষয়টি নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে সবাই মিলে আনারকে জাপটে ধরে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর বিষয়টি শাহীনকে নিশ্চিত করেন আমান।
লাশ গুম করতে করা হয় অসংখ্য টুকরো
আমানের দেওয়া তথ্যের বরাতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, শাহীনের পরামর্শ মতো লাশ গুম করতে এমপি আনারকে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। এরপর ফ্ল্যাটের কাছেই শপিং মল থেকে আনা হয় দুটো বড় ট্রলিব্যাগ ও পলিথিন। এমপি আনারের মরদেহের টুকরোগুলো পলিথিনে পেঁচিয়ে ট্রলিব্যাগে ভরা হয়। এরপর ঘটনার রাতে লাশের টুকরোসহ দুটি ট্রলিব্যাগ বাসাতেই রাখা হয়। এরমধ্যে তারা বাইরে থেকে ব্লিচিং পাউডার এনে ঘরের রক্তের দাগ পরিষ্কার করে।
বুধবার কলকাতা পুলিশ ওই ফ্ল্যাট ও আশপাশের ভবনের সব সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখেছে, আমান ও তার সহযোগীরা মিলে ট্রলিব্যাগ আনা-নেওয়া করছে। এমপি আনারের বাইরে রাখা জুতা ভেতরে নেওয়ার দৃশ্যও দেখা যায়। এছাড়া বান্ধবী সিলিস্তা রহমান বাইরে থেকে পলিথিন ও ব্লিচিং পাউডার নিয়ে হাঁটছে এটাও দেখা যায়।
গোয়েন্দাদের কাছে আমানের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, এমপি আনারকে হত্যার পর টুকরো টুকরো করে ১৪ মে বিকেলে একটি ট্রলিব্যাগ হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হন আমান। এরপর পাশের একটি শপিং মলের সামনে সেই ট্রলিব্যাগটি সিয়ামের হাতে তুলে দেন। সিয়াম সেই ব্যাগ নিয়ে তাদের আগে থেকেই ভাড়া করে রাখা গাড়ি নিয়ে অজ্ঞাত স্থানের দিকে চলে যান। তবে সেই গাড়িচালককে কলকাতা পুলিশ আটকের পর জানতে পেরেছে, গাড়ি কিছু দূর যাওয়ার পর ব্যাগটি নিয়ে নেমে যান সিয়াম।
আমান জানান, লাশের টুকরোসহ আরেকটি ব্যাগ বাসাতেই ছিল। সেই ব্যাগ থেকে দুর্গন্ধও ছড়ানো শুরু করে। পরে লাশের ওই টুকরোসহ ব্যাগটি সহযোগীদের অন্য কোথাও ফেলে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে ১৫ মে সিলিস্তাকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন আমান। আর আমানের দুই সহযোগী এমপি আনারের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল নিয়ে দুই দিকে চলে যায়, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমপি আনারের অবস্থান সম্পর্কে বিভ্রান্ত হয়। এরপর ১৭ মে মোস্তাফিজ ও ১৮ মে ফয়সাল বাংলাদেশে ফেরত আসেন।
পাঁচ কোটি টাকায় চুক্তি
জিজ্ঞাসাবাদে আমান জানিয়েছেন, এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার জন্য পাঁচ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। হত্যাকাণ্ডের আগে কিছু টাকা পরিশোধ করেন। বাকি টাকা হত্যার পর দেওয়ার কথা ছিল। হত্যার পর লাশ গুমের দায়িত্ব দিয়ে আমান ঢাকায় এসে শাহীনের সঙ্গে সাক্ষাত করে। তবে শাহীন তাকে কত টাকা দিয়েছেন সে বিষয়ে কোনো উত্তর দেননি আমান। ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুরের বোনের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন আমান। সেখান থেকেই তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর আজীমকে খোঁজাখুঁজি শুরু হলে গত ১৮ মে ভারত চলে যান শাহীন।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ভারত থেকে শাহীন নেপালে যান। গত ২১ মে নেপাল থেকে দুবাই যান এবং সবশেষ ২২ মে দুবাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন তিনি।
গোয়েন্দা পুলিশর ধারণা, এমপি হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে সোনা চোরাচালানের অর্থ ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে। শাহীন নিজেও একজন সোনা চোরাচালানকারী। এমপি আজীমের বিরুদ্ধেও সোনা চোরাচালানের অভিযোগ রয়েছে। কলকাতায় শাহীন ও আজিমের যৌথ ব্যবসা রয়েছে।
এ ঘটনায় ডিএমপির শেরেবাংলা নগর থানায় নিহত এমপি আজীমের মেয়ে ডরিন একটি হত্যা মামলা করেছেন। সংসদ ভবন এলাকায় থাকতেন এবং সেখান থেকেই ভারতে গিয়েছিলেন। সেজন্য এই থানায় মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক। এছাড়া কলকাতা পুলিশ বাদী হয়ে আরও একটি মামলা করেছে।
এমপি আনারের মরদেহ টুকরো করে ৩ জনে বাইরে নেন
চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নৃশংসভাবে খুন হলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। নিখোঁজ হওয়ার আট দিন পর তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শাসকদলের এই সংসদ সদস্য কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধাননগরের নিউটাউন এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনসের একটি আধুনিক ফ্ল্যাটে তাকে হত্যা করা হয়।
কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যা রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। সেখানকার পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১৩ মে তারিখ দুপুরের পর তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেনে। সেসময় তার সঙ্গে ছিলেন দুই পুরুষ ও এক নারী। তারা চারজনেই ওঠেন আবাসনের বি-ইউ ব্লকের ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটে।
রক্তের দাগ ও একাধিক পায়ের চিহ্ন দেখে পুলিশের অনুমান, ওই রাতে চারজন একসঙ্গেই ছিলেন। এরপর সেখানে তাকে হত্যা করা হয়। পরে লাগেজে করে মরদেহের টুকরো বের করে নেয় দুষ্কৃতকারীরা। এ কাজ করতে সময় লাগে তিন দিন। তারা পরিকল্পিতভাবে প্রতিদিনই লাগেজ নিয়ে একজন করে বের হয়েছে। পুলিশের অনুমান, প্রথমে বের হন ওই নারী। এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ। তবে কারা গ্রেফতার হয়েছেন, তারা বাংলাদেশি নাকি ভারতীয় এ নিয়ে পুলিশ মুখ খোলেনি।
রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, এখনই তদন্তের স্বার্থে কিছু বলব না। গোয়েন্দা প্রধান জানান, সিসিটিভি ফুটেজ ও লিংকম্যানের মাধ্যমে তদন্ত শিগগিরই শেষ হবে।
পুলিশ জানায়, ওই ফ্ল্যাটের মালিক সন্দীপ রায়। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি বিভাগে রয়েছেন। অথচ তিনি ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান নামে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশিকে। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ওই বাংলাদেশি কোথায়? পুলিশ বলছে, এখনই এ নিয়ে কোনো তথ্য দেব না। তবে পুলিশ নিশ্চিত- এটি নিখোঁজের ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হত্যা। এখন ফ্ল্যাটে ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
কলকাতার নিউ টাউনে এমপি আনারের মরদেহ মিলল
চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ কলকাতা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
নিউ টাউনের সঞ্জীবনী গার্ডেন এলাকা থেকে এ সংসদ সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন সংসদের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আব্দুর রউফ।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারুল আজীম পশ্চিমবঙ্গে যান ১২ মে। পরদিন থেকে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে আর ফেরেননি জানিয়ে ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন গোপাল বিশ্বাস নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি।
গোপাল বিশ্বাস জিডিতে উল্লেখ করেন, ‘আনোয়ারুল আজীমের সঙ্গে তার ২৫ বছর ধরে পারিবারিক সম্পর্ক। ১২ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আনোয়ারুল আজীম কলকাতার মণ্ডলপাড়া লেনে তার (গোপাল বিশ্বাস) বাড়িতে আসেন। তিনি কলকাতায় আসেন চিকিৎসা করাতে। পরদিন (১৩ মে) স্থানীয় সময় (কলকাতা) বেলা পৌনে ২টার দিকে ডাক্তার দেখানোর জন্য গোপাল বিশ্বাসের বাড়ি থেকে বের হন আনোয়ারুল আজীম। যাওয়ার সময় তিনি (আনোয়ারুল) বলে যান, দুপুরে খাবেন না। সন্ধ্যায় ফিরে আসবেন। পরে তিনি কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে এসে নিজেই গাড়ি ডেকে চলে যান। ’
জিডির তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারুল আজীম সন্ধ্যায় গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ফেরেননি।
ভারতে নিখোঁজ হওয়া এমপি’র সন্ধানে কাজ চলছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি সব সংস্থাগুলো এটা নিয়ে কাজ করছে। আমাদের এনএসআই, এসবি ও পুলিশ কাজ করছে। ভারতীয় পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি, ভারতীয় সরকারের মাধ্যমে শিগগিরই তার বিষয়ে জানতে পারবো।’
মঙ্গলবার (২১ মে) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব তথ্য দেন।
মন্ত্রী জানান, ‘ভারতের ইমিগ্রেশন পার হয়ে যথাযথভাবেই তিনি ভারতে যান। তার পরিবার থেকে আমাদের জানানো হয়েছিল যে তার কোনো খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে না।’
তার বিষয়ে কোনো আপডেট (হালনাগাদ তথ্য) পাওয়া গেছে কিনা এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোনো আপডেট নেই। যতটুকু শুনছি, আনারের মোবাইলটাও বন্ধ আছে।’
উল্লেখ্য, গত ১৬ মে থেকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের খোঁজ যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
আপনার মন্তব্য লিখুন