যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে চুক্তির প্রথম সপ্তাহেই গাজা ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং চুক্তির গ্যারান্টর (নিশ্চয়তাদাতা) হিসেবে রাশিয়া, চীন ও তুরস্ক চেয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষিত এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদিত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নীতিগতভাবে মেনে নিয়েও তাতে কিছু সংশোধনী দিয়েছে সংগঠনটি। হামাস তিন ধাপবিশিষ্ট যুদ্ধবিরতির একেবারে প্রথম দিকেই গাজা থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছে। একইসাথে তারা যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধের সুস্পষ্ট ঘোষণা চাচ্ছে।
গত মাসে বাইডেন প্রশাসন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পেশ করে হামাসকে তা মেনে নিতে বলেন। তিনি বলেন, এটি ইসরায়েলি প্রস্তাব। এতে তিন ধাপে বাস্তবায়নযোগ্য চুক্তিতে প্রথম ধাপের (ছয় সপ্তাহ) পরই কেবল ইসরায়েলি পূর্ণ প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। ওয়াশিংটন বলেছে, হামাসের সংশোধনীগুলোর কিছু বাস্তবায়নযোগ্য নয়।
হামাস মনে করছে, প্রথম ধাপের যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবকে কাজে লাগিয়ে বেশ কিছু বন্দীকে মুক্ত করিয়ে নেবে ইসরায়েল। এরপর তারা আবার আরও ভয়াবহভাবে হামলা করবে। তাছাড়া হামলা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার কোনও ঘোষণা এখন পর্যন্ত ইসরায়েল দেয়নি। বরং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ ইসরায়েলি নেতারা প্রকাশ্যে হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত যুদ্ধ অব্যাহত রাখার কথা বলছেন। ফলে হামাস বিদ্যমান আকারে থাকা প্রস্তাবটি মেনে নিতে পারছে না।
লেবাননের আল-আখবার আউটলেটে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, হামাস যুদ্ধবিরতির প্রথম সাত দিনের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ সালাহউদ্দিন এবং আল-রশিদ মহাসড়ক, নেটজারিতের সেনাস্থাপনা, মিশর-গাজা সীমান্ত-সংলগ্ন ফিলাডেলফি রুট এবং রাফা ক্রসিং থেকে সকল ইসরায়েলি সৈন্য ও স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েল যদি সাত দিনের মধ্যে গাজা থেকে পুরোপুরি প্রত্যাহার না করে, তবে তারা বন্দী মুক্তি স্থগিত করবে।
হামাসের একটি সূত্র হারেৎজ পত্রিকাকে জানিয়েছে, হামাস এ কারণে প্রথম ধাপেই ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিচ্ছে, যাতে ইসরায়েল কোনও পর্যায়েই এ দুটি শর্ত থেকে সরে যেতে না পারে এবং পণবন্দীদের মুক্তির পর আবার যুদ্ধ শুরু করতে না পারে।
এছাড়া হামাস ইসরায়েলের কারাগারে দীর্ঘ দিন ধরে আটক থাকা ১০০ ফিলিস্তিনির একটি তালিকা দিয়েছে। বন্দী বিনিময়ের আওতায় তাদেরকে মুক্তি দিতেও দাবি জানাচ্ছে হামাস।
অন্যদিকে ইসরায়েল ১৫ বছরের বেশি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কোনও বন্দীকে মুক্তি দিতে চাচ্ছে না।
আবার ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই চুক্তির গ্যারান্টর হিসেবে রাশিয়া, চীন ও তুরস্ককে মেনে নিতে রাজি হচ্ছে না।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল
হামাসের ঘোষণা, যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন আলোচনা নয়
ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন করে আলোচনার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
সংগঠনটির শীর্ষস্থানীয় নেতা ওসামা হামদান এ কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, “এখন অবিলম্বে ইসরায়েলের যা করা দরকার তা হলো গাজা থেকে তাদের পূর্ণ প্রত্যাহার এবং সকল ধরনের আগ্রাসন বন্ধ করা।”
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরুর খরব ইসরায়েলি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষাপটে তিনি এই মন্তব্য করলেন।
শনিবার তিনি বলেন, “হামাস ইতোমধ্যেই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, যা ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে। সুতরাং নতুন করে আলোচনার দরকার নেই।”
তিনি বলেন, “আলোচনার সময় নতুন প্রস্তাব ইসরায়েল গ্রহণ করবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। এমন কোনও আন্তরিক নিশ্চয়তা না থাকলে আলোচনার অর্থ হল আগ্রাসন অব্যাহত রাখার জন্য ইসরায়েলকে আরও সময় দেওয়া।”
চলতি মাসের প্রথম দিকে হামাস যুদ্ধবিরতির জন্য কাতার ও মিশরের মধ্যস্ততাকারীদের দেওয়া একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। কিন্তু ইসরায়েল জানায়, এই প্রস্তাবে তাদের দাবি মানা হয়নি।
শনিবার ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, গাজায় বন্দী ইসরায়েলিদের মুক্তির জন্য কর্মকর্তারা নতুন করে আলোচনা শুরু করতে চাচ্ছেন। প্যারিসে মধ্যস্ততাকারীদের সাথে আলোচনার পর তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানানো হয়।
ওই খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলি গোয়েন্দাপ্রধান ডেভিড বার্নিয়া স্থবির হয়ে যাওয়া আলোচনা আবার শুরু করার নতুন কাঠামোতে একমত হন। প্যারিসে বার্নিয়া ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ পরিচালক বিল বার্নস, কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আলথানি উপস্থিত ছিলেন।
নতুন যে প্রস্তাব ইসরাইল দিয়েছে, তাতেও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির কথা নেই। এমনকি কয়েক মাসের যুদ্ধবিরতি হলেও ইসরায়েল আবার যুদ্ধ শুরু করতে পারবে বলে বলা হয়েছে। ইসরায়েল জোর দিয়ে বলছে, হামাসকে ধ্বংস করার আগে তারা যুদ্ধ বন্ধ করবে না।
হামাস জোর দিয়ে বলছে, তারা সাময়িক কোনও যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মানবে না। তারা স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধ করতে চায়।
এদিকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড ইসরায়েলের একদল সৈনিককে ফাঁদে ফেলে বন্দী করার দাবি করেছে। ফিলিস্তিনি গ্রুপটি একটি রেকর্ড করা অডিও বার্তায় এই দাবি করে। গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় তাদের বন্দী করা হয় বলে এতে জানানো হয়।
কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা অবশ্য কতজন ইসরায়েলি সৈন্যকে বন্দী করা হয়েছে, সে তথ্য দেননি। তবে তিনি জানিয়েছেন, ওই ইসরায়েলি সৈন্যদলে যত সৈন্য ছিল তারা সবাই হয় নিহত বা আহত অথবা বন্দী হয়েছে। হামাস এ নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা এক ইসরায়েলি সৈন্যকে টেনে হামাসের একটি সুড়ঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র: আল-জাজিরা
হামাসের ঘোষণা, যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েলকে আর কোনও ছাড় নয়
ইসরায়েলকে গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা নিয়ে সমঝোতায় আর কোনও ছাড় দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
সম্প্রতি মিশরের দেওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়ার পর ইসরায়েল তা না মানায় এই ঘোষণা দিল হামাস। মিশরের কায়রোয় যুদ্ধবিরতি আলোচনা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
গাজার সর্বদক্ষিণের শহর রাফায় বুধবারও ট্যাংক থেকে গোলা নিক্ষেপ ও বিমান হামলা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেই সঙ্গে হুমকি দিয়েছে বড় ধরনের অভিযান শুরু করার।
আগের দিন মঙ্গলবার মিশরের সঙ্গে রাফার সীমান্ত ক্রসিং থেকে শহরটিতে প্রবেশ করে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে গাজায় বাইরে থেকে ত্রাণ সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ পথটি বন্ধ হয়ে যায়। ইসরায়েলি হামলায় আহত ফিলিস্তিনিদের বাইরে পাঠানোর একমাত্র পথও এটি।
কাতারে হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সদস্য ইজ্জাত এল–রেশিক বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, তারা গত সোমবার গ্রহণ করা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বাইরে যাবেন না।
প্রস্তাবে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে গাজায় জিম্মি ইসরায়েলিদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে মুক্তি ও ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা আছে।
রেশিক বলেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর ব্যাপারে আন্তরিক নয় এবং রাফায় আগ্রাসন চালানো ও সীমান্ত ক্রসিং দখলের ঘটনা আড়াল করার মাধ্যম হিসেবে সমঝোতাকে ব্যবহার করছে তারা।
হামাসের এ বক্তব্য নিয়ে ইসরায়েল তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য করেনি। গত সোমবার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে, হামাসের গ্রহণ করা তিন দফার ওই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মানা সম্ভব নয়; কেননা এটির শর্তগুলো খুব দুর্বল এবং তা কার্যকর করার মতো নয়।
সূত্র: রয়টার্স
যুদ্ধবিরতি-জিম্মি বিনিময় চুক্তি: যে দুই দাবিতে অনড় হামাস
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তি নিয়ে দুটি দাবিতে অনড় অবস্থান নিয়েছে গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস।
সংগঠনটি জানিয়েছে, তারা মধ্যস্ততাকারীদের দেওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করছে। তবে তারা আবারও জোর দিয়ে বলছে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর পূর্ণ প্রত্যাহারের শর্ত দুটি না মানা হলে কোনও প্রস্তাবই গ্রহণ করবে না। মিশরীয় মিডিয়া এ খবর প্রকাশ করেছে।
হামাসের শর্ত দুটিই আলোচকদের কাছে যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রধান বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন দাবি করেন, ইসরায়েলি প্রস্তাবটি ‘অনন্যসাধারণ উদার’ প্রস্তাব। আর মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি নতুন প্রস্তাবের ব্যাপারে ‘আশাবাদী’।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, গাজা থেকে জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে হামাসের সিনিয়র নেতা ওসামা হামদান বলেন, “ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে হামলা বন্ধ করাটা কোনও উদার করা নয়। খোদ হামলাই একটি অপরাধ। ফলে আপনি যখন কোনও অপরাধ করা বন্ধ করবেন, তখন আপনি দাবি করতে পারেন না যে এটি ইসরায়েলি পক্ষ থেকে একটি উদার কাজ।”
ইসরায়েল-হামাস চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতার।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল-ফাত্তাহ আল সিসি এবং কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানিকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে গাজা নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে কোনও চুক্তি হলে তারা তিন দেশ ওই যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তাবলী ‘পূর্ণ বাস্তবায়নে কাজ’ করবে।
এদিকে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, বাইডেন ওই দুই নেতাকে বলেছেন- বন্দি বিনিময় বিষয়টি এখন হামাসের হাতে। তারাই তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি এবং গাজার বেসামরিক লোকদের স্বস্তি দেওয়ার পথে একমাত্র বাধা।
ওই তিন নেতা বর্তমানে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা গাজায় ত্রাণ সহায়তা বাড়ানোর চেষ্টাও চালাচ্ছেন বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা, টাইমস অব ইসরায়েল
নেতানিয়াহুর গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যুতে আইসিসিকে হুমকি মার্কিন আইনপ্রণেতাদের
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতকে (আইসিসি) হুমকি দিলেন মার্কিন আইণপ্রণেতারা।
তারা বলেছেন, যদি ইসরায়েলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয় তাহলে আদালতের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয়পক্ষের মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা আইসিসির বিরুদ্ধে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেক্সাসের রিপাবলিকান হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান মাইকেল ম্যাককাউল বলেছেন, ইতোমধ্যে আইসিসি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য একটি বিলের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। তবে আমরা আশা করছি, সেই পর্যায়ে যেন যেতে না হয়।
এদিকে, গাজা যুদ্ধ ইস্যুতে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির সম্ভাব্য অভিপ্রায়ের নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন।
জনসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এটি লজ্জাজনক যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘ভিত্তিহীন এবং অবৈধ’ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরিকল্পনা করছে।”
তিনি আরও বলেন, “আইসিসির এ ধরনের ‘অনৈতিক’ পদক্ষেপ সরাসরি মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বাইডেন প্রশাসন যদি এর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ না করে, তাহলে আইসিসি মার্কিন রাজনীতিক, মার্কিন কূটনীতিক এবং মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নজিরবিহীন ক্ষমতা পেয়ে যাবে এবং তা চর্চাও করতে পারে। আর এটি হলে আমাদের দেশের সার্বভৌম কর্তৃত্ব হবে।”
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল, এক্সিওস
ইসরায়েলবিরোধী মার্কিন ক্যাম্পাস বিক্ষোভে সমর্থন ১৯০ পরামর্শক গোষ্ঠীর
মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসভিত্তিক ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে সমর্থন ও সংহতি জানিয়েছে প্রায় ১৯০টি পরামর্শক গোষ্ঠী।
একই সঙ্গে ব্যাপক ধরপাকড় সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা যেভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাতে তাদের সাহসের প্রশংসাও করেছে গোষ্ঠীগুলো।
গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রয়েছে- ধর্মীয়, নাগরিক অধিকার ও প্রগতিশীল ভাবধারার সংগঠনগুলো।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্বিচারে আগ্রাসনকে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থনের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
পরামর্শক গোষ্ঠীগুলোর কয়েকটি ওয়ার্কিং ফ্যামিলিস পার্টি, ইফ নট নাউ মুভমেন্ট, সানরাইজ মুভমেন্ট, মুভমেন্ট ফর ব্ল্যাক লাইভস ও জেন–জেড ফর চেঞ্জ। সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলো আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “ভীষণ রকম চাপের পরিবেশ, ভয়ভীতি ও প্রতিশোধের শিকার হওয়া সত্ত্বেও যেসব শিক্ষার্থী গাজায় ইসরায়েলি হামলা এবং দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তার বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিবাদ জানানোর অধিকারের চর্চা করছেন, তাদের প্রশংসা করি আমরা।”
সংগঠনগুলো বলেছে, শিক্ষার্থীরা এই সুস্পষ্ট দাবি নিয়ে এগিয়ে এসেছেন যে, যেসব প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলের দখলদারিত্ব থেকে সুবিধা নিচ্ছে, এদের সঙ্গে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পর্ক নেই। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবেশের দাবি জানাচ্ছেন তারা।
বিবৃতিতে সই করা সংগঠনগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে- আরব আমেরিকান ইনস্টিটিউট, এমপাওয়ার চেঞ্জ অ্যাকশন ফান্ড, গ্রিনপিস ইউএসএ এবং জাস্টিস ডেমোক্র্যাটস।
উল্লেখ্য, আমেরিকার নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ ইতোমধ্যে ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়েছে বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসভিত্তিক এই বিক্ষোভ কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা
দেশ ছাড়ার হিড়িক ইসরাইলিদের
ইসরাইলের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্কিত একটি আইনের বিরুদ্ধে কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। এর মধ্যে ইসরাইলের প্রতি তিনজনের একজন নাগরিক দেশ ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন। নতুন এক জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সেদেশের অধ্যাপক চেন হফম্যান একজন। তার স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যায় একসঙ্গে খাবার খেয়ে ইহুদি সাবাথ পালন করেন। সম্প্রতি বিক্ষোভের তীব্রতার কারণে নিয়মিত এই অভ্যাস ব্যহত হচ্ছে তার।
বিবিসিকে তিনি বলেন, রাস্তায় গিয়ে প্রতিবাদ করা আমাদের সংস্কৃতি নয়। কিন্তু আমরা বাধ্য হয়েছি কারণ আমাদের দেশটিকে হারিয়ে ফেলছি। আমরা এভাবেই ভাবছি।
শীর্ষস্থানীয় ইসরাইলি এই রেডিওলজিস্ট এখন যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চলে যাচ্ছেন। তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সকলেরই অবশ্য ইউরোপীয় পাসপোর্ট রয়েছে। তিনি পরিবারের অন্য সদস্যদের দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, আমি একটি অবসরের জন্য লন্ডন যাচ্ছি। ইসরাইলের বাইরে আমি থাকতে পারি কি না সেটাও পরীক্ষা হবে। যদি পরিস্থিতি এত খারাপ হয় এবং খারাপ হতে থাকে, আমরা থাকার জন্য একটি নতুন জায়গা খুঁজে নেব।
ইসরাইলের সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা খর্ব করে একটি বিলে গত ২৪ জুলাই সম্মতি দিয়েছে পার্লামেন্ট নেসেট। এই আইন অনুযায়ী, সরকার, মন্ত্রিপরিষদ এবং সরকারি কর্মকর্তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটিকে সুপ্রিম কোর্ট ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করতে পারবে না। বিরোধীরা এই আইনের তীব্র বিরোধিতা করে আসছেন। তাদের দাবি, এমন আইন সরকারের ভারসাম্য বিনষ্ট করবে এবং সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা কমাবে।
আইনটি বাতিলের দাবিতে গত কয়েক মাস ধরে ইসরাইলে ব্যাপক প্রতিবাদ চলছে। তাদের আশা, শেষ পর্যন্ত আইনটি বাতিল হবে। তবে এমন পরিস্থিতিতে অনেক ইসরাইলি দেশত্যাগের কথা বিবেচনা করছেন।
প্রতিবাদে অংশ নেওয়া সারা বলেন, আমি আমার বাচ্চাদের এমন অগণতান্ত্রিক একটি দেশে বড় করতে চাই না। একজন তরুণি হিসেবে আমার মেয়ের অধিকার নিশ্চিত না হলে আমি এদেশে থাকব না।
ইমিগ্রেশন বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েকমাসে থিতু হওয়ার জন্য বিদেশে যেতে চাওয়া ইসরাইলির সংখ্যা ব্যাপক বেড়েছে। সরকারের বিচারিক পরিবর্তনের প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক পতন এবং ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় তাদের চলে যেতে বাধ্য করছে।
পর্তুগালভিত্তিক স্থানান্তর বিশেষজ্ঞ রুথ নেভো জানান, প্রথমবারের মতো ইসরাইলি গ্রাহকদের দেখতে পাচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, এটি একেবারেই পাগলামির মতো। বছরের পর বছর ধরে এখানে কোনো ইসরাইলি বাস করতে আসেনি। কিন্তু এখন দিনে ২৫টির মতো আবেদন আসছে।
তিনি বলেন, যারা আবেদন করছে তারা উচ্চশিক্ষিত। আইনজীবী, বিচারক, পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার, আইটি সেক্টরের লোক বেশি আসছে। তারা (ইসরাইলে) যা ঘটছে তা নিয়ে খুব চিন্তিত।
ওশান রিলোকেশন নামের একটি ফার্মের সিইও শে ওবাজানেক বলেন, কোন দেশে গেলে ভালো, কিভাবে প্রক্রিয়া শুরু করব— এসব তথ্যের চাহিদা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। যাদের বিদেশি পাসপোর্ট আছে তারা আমাদের কাছে পরামর্শ চাচ্ছেন।
যদিও সাধারণত দেখা যায়, যারা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশ ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন তাদের বেশিরভাগই একসময় এই পরিকল্পনা ত্যাগ করেন। যেমন, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বহু আমেরিকান দেশ ছাড়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু পরে দেখা যায়, প্রায় সবাই এমন পরিকল্পনা ত্যাগ করেছেন।
তবে ইসরাইলের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশটির জনগণকে গভীরভাবে বিভক্ত করে ফেলেছে। বর্তমান জোট সরকার অতি-অর্থোডক্স ইহুদি এবং ধর্মীয় জাতীয়তাবাদীদের সমর্থনে গঠিত। এ সরকার সামাজিকভাবে রক্ষণশীল মূল্যবোধের এবং জনসংখ্যার তুলনামূলকভাবে উচ্চজন্মহারের মানুষরা এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। ফলে জোট সরকার দেশটির দ্রুত বর্ধনশীল অংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
এদিকে, ধর্মনিরপেক্ষ ইসরাইলিরা দেশে সংখ্যালঘু হয়ে যাওয়ায় তাদের উদার জীবনধারা হুমকির মুখে পড়েছে। তাদের আশঙ্কা, আদালত আর তাদের নাগরিক অধিকার রক্ষা করতে পারবে না।
তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক পলিসি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক অ্যালন তাল বলেন, গত ছয় মাসে যা ঘটেছে তা হলো একটি ধীরগতির ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাগত বিভক্তি হঠাৎ করে স্পষ্ট হয়ে উঠা।
তিনি বলেন, ইসরাইলের করের সবচেয়ে বড় বোঝা বহন করছে ধর্মনিরপেক্ষ ইহুদিরা। এদের বেশিরভাগ বাধ্যতামূলক সামরিক পরিষেবায় যুক্ত হয়। অতি-অর্থোডক্স কমিউনিটির মানুষরা সেনাবাহিনীতে যায় না। কয়েক দশক আগেই তাদের সেনাবাহিনীতে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এখন তারা এর সুবিধা ভোগ করছে।
ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবের উপকণ্ঠে শেবা মেডিক্যাল সেন্টারের অধ্যাপক হফম্যান জানান, তিনি ইসরাইলে ভ্রূণের নিউরোডিওলজির মাত্র চারজন বিশেষজ্ঞের একজন।
ইসরাইলের প্রতি তিনজনের একজন বিদেশ চলে যেতে চান এমন এক জরিপের ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা হলে বলেন, এখনই চিকিৎসকদের সংকট। আমাদের পাঁচ শতাংশ চিকিৎসকও যদি বিদেশে চলে যায় তাহলে তা একটি বিপর্যয় হবে।
আপনার মন্তব্য লিখুন