মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পোন্নাগিউনের দেশটির সামরিক জান্তার সর্বশেষ ঘাঁটিটি দখল করে নেওয়ার দাবি করেছে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। এর মধ্য দিয়ে রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ে থেকে প্রায় ২০ মাইল উত্তর-পূর্ব দিকে শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি। তারা দাবি করেছে, এখন রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ের দিকে দৃষ্টি তাদের।
ওই সামরিক ঘাঁটি দখলের সময় চলা যুদ্ধে সেনাবাহিনীর যুদ্ধবিমান ও নৌবাহিনীর যুদ্ধযান থেকে বোমা হামলা করা হয়। আরাকান আর্মির বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় তারা। এক পর্যায়ে পোন্নাগিউনের পতনের পর সামরিক বাহিনীর যুদ্ধবিমান জাই তি পিয়ান ব্রিজ ধ্বংস করে দেয়। এই ব্রিজটি পোন্নাগিউন ও রাথেডাংকে সংযুক্ত করেছিল। সোমবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টার দিকে সেখানে ১২ বার হামলা চালায় সামরিক জান্তা। মঙ্গলবার পর্যন্ত আরাকান আর্মির কাছে আটটি শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সামরিক বাহিনী। এর মধ্যে আছে চিন রাজ্যের পালেতোয়া।
এর বাইরে আছে বিপুল পরিমাণ বড় ঘাঁটি ও আউটপোস্ট, নৌযান।
গত বছরের ১৩ নভেম্বর থেকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর বিদ্রোহীরা। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক পরাজিত হচ্ছে সেনাবাহিনী।
আরাকান আর্মির মুখপাত্র ইউ খাইং থুখা সোমবার এক অনলাইন সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিষয়টি জানান।
তিনি বলেন, পুরো রাখাইনকে স্বাধীন না করা পর্যন্ত এবং রাজ্য থেকে সামরিক শাসকগোষ্ঠীকে উৎখাত না করা পর্যন্ত অব্যাহতভাবে লড়াই চালিয়ে যাবে আরাকান আর্মি। সামরিক জান্তার সঙ্গে চীনের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে আরাকান আর্মি-সহ তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী গ্রুপের জোট দ্য থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স জানুয়ারিতে শান রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে হামলা চালানো স্থগিত করে। কিন্তু সেই যুদ্ধবিরতি রাখাইন রাজ্যের জন্য প্রযোজ্য ছিল না। এই রাজ্যে সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখে আরাকান আর্মি। এই গ্রুপটির ডেপুটি কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. নিও তুন অং সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, হাইজেং চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে শুধু উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে যুদ্ধবিরতি চলছে। চীনের মধ্যস্থতায় আলোচনায় আমরা চীন-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য, অনলাইনে অনিয়ম এবং শান রাজ্যের সীমান্তে স্থিতিশীলতা নিয়ে কথা বলেছি। রাখাইনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।
এখন পোন্নাগিউন দখলের পর রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ে দখল করে নিতে পারে আরাকান আর্মি। পোন্নাগিউন থেকে মাত্র ৪৫ মিনিটের পথ সিতওয়ে।
একজন সামরিক বিশ্লেষক বলেছেন, সামরিক জান্তার সেনাদের কাছ থেকে যেসব অস্ত্র জব্দ করেছে আরাকান আর্মি, এখন সেটা ব্যবহার করেই তারা রাজধানীতে সামরিক ঘাঁটিকে টার্গেট করতে পারবে।
তিনি বলেন, এই স্থানটি সিতওয়ের খুবই কাছে। পোন্নাগিউন থেকেই সিতওয়েতে সামরিক ঘাঁটিতে গোলা নিক্ষেপ করা সম্ভব। আরাকান আর্মি এরই মধ্যে রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, তারা পুরো রাজ্যে জয়লাভ করেছে। রাজ্যের অন্য এলাকাগুলোতে এখনও কিছু সামরিক ঘাঁটি আছে।
সূত্র: দ্য ইরাবতি, মিয়ানমার নাউ, রেডিও ফ্রি এশিয়া।
রাখাইনের সেনা ঘাঁটি দখল করল আরাকান আর্মি
জান্তা বাহিনী হটিয়ে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যের মিনবিয়া শহরের সেনা ঘাঁটি দখলে নেওয়ার দাবি করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ)। স্থানীয় সময় রবিবার আরাকান আর্মিরা ঘাঁটিটি দখল করে নেয়। এটি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ৩৮০ ব্যাটালিয়নের ঘাঁটি বলে জানা গেছে।
তবে এখনও ওই এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বলা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে আরাকান আর্মি জানিয়েছে, ম্রাউক ইউ শহরে সেনাবাহিনীর ৩৭৭ ও ৫৪০ ব্যাটালিয়ন ও পুলিশের ৩১ ব্যাটালিয়ন থেকে গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। জান্তা বাহিনীর গোলাবর্ষণে এ শহরের চার বাসিন্দা নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, জান্তা সৈন্যরা রামরি শহরে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলা চালিয়ে আসছে।
তবে শহরটিতে আরাকান আর্মির বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্মুখ লড়াইয়ের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। মিনবিয়া শহরের খোয়া সোন গ্রামে সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণে অন্তত তিন বাসিন্দা গুরুতর আহত হয়েছে।
এর আগে, আরাকান আর্মির যোদ্ধারা ২৪ জানুয়ারি পাকতাও শহরের দখল নেয়। এরপর থেকেই জান্তা বাহিনী ওই শহরে বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ শুরু করে।
সূত্র: দ্য ইরাবতি
আপনার মন্তব্য লিখুন