ইসরায়েলি গুপ্তহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া খালেদ মেশাল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক নেতা হতে পারেন। বুধবার নিহত ইসমাইল হানিয়ার সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হচ্ছে। রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
১৯৯৭ সালে ইসরায়েলি এজেন্টরা জর্ডানের আম্মানে মেশালকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করতে চেয়েছিল। এ হামলার পর জর্ডানের তৎকালীন রাজা বিষের প্রতিষেধক সরবরাহ করে হত্যার চেষ্টাকারীদের দন্ড ও ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছিলেন।
ইসরায়েল জর্ডানি রাজার দাবি মেনে নেয়। একই সঙ্গে তারা হামাস নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনকে মুক্তি দেয়। যদিও সাত বছর পর গাজায় তাকে হত্যা করা হয়।
ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে হামাস একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। তাদের দাবি, ইসরায়েলের ধ্বংসের জন্য লড়াই করছে তারা। কিন্তু ফিলিস্তিনি সমর্থকদের কাছে মেশাল ও হামাসের নেতৃত্ব ইসরায়েলি দখল থেকে মুক্তি সংগ্রামের নেতা। মেশালকে ইসমাইল হানিয়ার স্থলাভিষিক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে। ১৯৯০-এর শেষের দিক থেকে হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন মেশাল। তিনি অনেকটাই নিরাপদে নির্বাসনে থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০০৪ সালের মার্চে বিমান হামলায় হুইলচেয়ার নিয়ে চলাফেরা করা ইয়াসিন নিহতের পর এক মাসের মধ্যে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়া আবদেল-আজিজ আল-রান্ডিসিকেও হত্যা করা হয়। হামাসের অন্য নেতাদের মতো মেশাল ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে আরও বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হবে কি না সেই জটিলতায় পড়েছেন। হামাসের ১৯৮৮ সালের সনদে ইসরায়েলকে ধ্বংসের আহ্বান জানানো হয়েছে।
মেশাল এখন দোহা ও কায়রোতে বাস করছেন। তার জীবনের বেশির ভাগ কেটেছে ফিলিস্তিনের বাইরে। পশ্চিমতীরের রামাল্লার কাছে সিলওয়াদে তার জন্ম। ছোটকালেই পরিবারের সঙ্গে কুয়েত পাড়ি জমান তিনি। ১৫ বছর বয়সে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডে যোগ দেন।
যুদ্ধবিরতির নিয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা এখনও হয়নি: হামাস নেতা
সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি বলে জানিয়েছেন হামাসের একজন শীর্ষ নেতা।
শনিবার লেবাননে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানান হামাস নেতা ওসামা হামদান।
তিনি বলেন, হামাসের নেতারা ইসরায়েল, কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের প্রস্তাবিত চুক্তিকাঠামোটি হাতে পেয়েছে। সেটি এখনও পর্যালোচনা চলছে।
এ বিষয়ে হামাসের অবস্থান ঘোষণার জন্য আরও সময় প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
হামদান বলেন, হামাস বরাবরই বলে আসছে- ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে এই বর্বর আগ্রাসন বন্ধের জন্য তারা যেকোনও উদ্যোগ নিয়ে আলোচনায় প্রস্তুত।
হামদান বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণ যে আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অবসান ঘটানোর আকাঙ্ক্ষার আলোকে হামাস শিগগিরই নিজের অবস্থান ঘোষণা করবে।
সূত্র: এপি
নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে হামাস
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল ও আমেরিকা, তা পর্যালোচনা করে দেখছেন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বসেন আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নস, ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়া এবং কাতার ও মিশরের কর্মকর্তারা। বৈঠকে কাতার ও মিশর মধ্যস্থতা করছে।
প্যারিস বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে খবর বেরিয়েছে, যুদ্ধবিরতির বিষয়টি ইসমাইল হানিয়াসহ হামাসের ঊর্ধ্বতন নেতারা পর্যালোচনা করে দেখছেন। এর আগে হামাস বারবারই জোর দিয়ে বলেছে, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ এবং গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত বন্দী বিনিময়ের ব্যাপারে তারা কোনও আলোচনা করবেন না।
হামাস মনে করে, যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিলে বিরতি শেষে ইহুদিবাদী দেশটি আবার সংঘাত শুরু করবে। এখন জিম্মিদের ব্যবহার করে হামাস যে রাজনৈতিক ও সামরিক সুবিধা আদায় করতে পারে, বন্দিদের মুক্তি দিলে সেই সুযোগ তাদের হাতছাড়া হবে। ফলে হামাসকে অনেকটা ব্যাকফুটে চলে যেতে হবে। সে কারণে সংগঠনটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি নয় বরং স্থায়ীভাবে যুদ্ধের অবসান চায়।
অন্যদিকে, ইসরায়েল মনে করছে হামাসকে নির্মূল করা ছাড়াই যদি তারা যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি করে তাহলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে এবং বলতে পারবে না যে, তারা আমাকে ধ্বংস করেছে। বরং উল্টো প্রশ্নের মুখে পড়বে- হামাসকে যদি ধ্বংস করা সম্ভব না-ই হয় তাহলে কেন এত দীর্ঘ সময় ধরে এই যুদ্ধ চালানো হল এবং এত মানুষের প্রাণহানির কী প্রয়োজন ছিল?
এ অবস্থায় ইসরায়েল উভয় সংকটে পড়েছে। সেক্ষেত্রে ইসরায়েলের যে চাওয়া, হামাসের চাওয়া প্রকৃতপক্ষে তার সম্পূর্ণ বিপরীত। এমন অবস্থায় দুই পক্ষের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ চুক্তি হওয়া সত্যিই কঠিন এবং বিষয়টি অনিশ্চিতও বটে।
সূত্র: আল জাজিরা
ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তায় ব্যাপক ধস: জরিপ
গাজা যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তায় এতটাই ধস নেমেছে, যা এর আগে কখনওই হয়নি।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন জরিপে অংশ নেওয়া মাত্র ২৩ শতাংশ ইসরায়েলি জনগণ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে তার অবস্থানে (প্রধানমন্ত্রী পদে) থাকতে দেখতে চান। অন্যদিকে, ৪১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন তারা সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্তজকে ক্ষমতায় দেখতে চান।
প্রায় চার সপ্তাহ আগে চলতি মাসের শুরুন দিকে আরেকটি জরিপ হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল- নেতানিয়াহুর পক্ষে সমর্থন ছিল প্রায় ২৯ শতাংশ। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ছয় শতাংশ জনসমর্থ হারিয়েছেন নেতানিয়াহু।
জরিপে আরও বলা হয়, এই মুহূর্তে দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে- নেতানিয়াহুর বিরোধী জোট ৬৮টি আসন পাবে। আর নেতানিয়াহু নেতৃত্বাধীন জোট পাবে ৪৭টি। অর্থাৎ তিনি (নেতানিয়াহু) আর প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। কারণ, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তিনি আর পর্যাপ্ত আসন পাবেন না।
সূত্র: আল জাজিরা
আপনার মন্তব্য লিখুন