লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর নিহতের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি বলেন, বিশ্বের মুসলিমদের যা আছে, তাই নিয়ে জালেম ইসরায়েলকে মোকাবিলা করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি লেবাননের জনগণ এবং হিজবুল্লাহর পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছেন। খবর ইরান ইন্টারন্যাশনালের।
গতাল এক বিবৃতিতে খামেনি বলেছেন, জায়নবাদীদের জানা উচিত যে, লেবাননে হিজবুল্লাহর মজবুত ভিত্তির বড় কোনো ক্ষতি করার যোগ্যতা তাদের নেই। এই অঞ্চলের সব প্রতিরোধী শক্তি হিজবুল্লাহর পাশে আছে এবং সমর্থন করবে। এই অঞ্চলের ভাগ্য নির্ধারণ করবে ইরানের ‘প্রতিরোধী শক্তি’। আর তাদের নেতৃত্বে থাকবে হিজবুল্লাহ।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতসহ বিভিন্ন স্থানে শুক্রবার রাতভর বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর কমান্ড সেন্টারে সংগঠনের নেতা হাসান নাসরুল্লাহ ও অন্য নেতাদের লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে। এর পর হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার খবর জানানো হয়। তবে হামলায় হাসান নাসরুল্লাহকে নিয়ে হিজবুল্লাহ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি। পরে হিজবুল্লাহপ্রধান নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে বিবৃতি দেয় সংগঠনটি। যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে ভাষণ দেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সেখানে নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিনের গাজা ও লেবাননে হামলা অব্যাহত রাখবে তার দেশ।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর পরই লেবাননে জোরালো হামলা চালানো হয়েছে। ১৯৬০ সালে জন্ম হাসান নাসরুল্লাহর। ৬৪ বছর বয়সী নাসরুল্লাহ বেড়ে উঠেছেন বৈরুতের পূর্বাঞ্চলীয় উপকণ্ঠের বুর্জ হামুদ এলাকায়। বাবা আবদুল করিম ছিলেন একজন সাধারণ সবজি বিক্রেতা। তার ৯ সন্তানের মধ্যে নাসরুল্লাহ ছিলেন সবার বড়। ১৯৭৫ সালে লেবানন গৃহযুদ্ধের মুখে পড়লে হাসান নাসরুল্লাহ শিয়া মুভমেন্ট ‘আমাল’-এ যোগ দেন। পরে ১৯৮২ সালে আরও কয়েকজনের সঙ্গে দলটি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। ১৯৮৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠার কথা জানানো হয়।
এতে যোগ দেন হাসান নাসরুল্লাহ। হিজবুল্লাহ শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে চিহ্নিত করে ‘ইসলামের প্রধান দুই শত্রু’ হিসেবে। সেই সঙ্গে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে ধ্বংস করার ডাক দেয় তারা। দেশটিকে আখ্যায়িত করে মুসলিমদের ভূমি দখলকারী হিসেবে। ১৯৯২ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে হিজবুল্লাহর প্রধান হন নাসরুল্লাহ। এর আগে ইসরায়েলের এক হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হন তার পূর্বসূরি আব্বাস আল-মুসাবি। হিজবুল্লাহপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর মুসাবি হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া ছিল হাসান নাসরুল্লাহর প্রথম কাজ। সে অনুযায়ী ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রকেট হামলার নির্দেশ দেন তিনি।
দখলকৃত লেবাননি ভূখন্ড থেকে ইসরায়েলি সেনাদের তাড়াতে প্রথমে একটি মিলিশিয়া দল হিসেবে গড়ে উঠেছিল হিজবুল্লাহ। পরে এ দলকেই লেবাননের সেনাবাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী এক বাহিনীতে রূপ দেন নাসরুল্লাহ। সংগঠনটি এখন দেশের রাজনীতিতেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তারকারী একটি শক্তি। সর্বশেষ হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল উত্তেজনা বেড়ে যায় গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকে। ওই দিন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের রকেট হামলার জের ধরে গাজায় নজিরবিহীন তান্ডব শুরু করে দেশটি।
ভারতকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য খামেনির, নয়াদিল্লি ক্ষুব্ধ
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, তারা যে দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন তার প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়লে নিজেদের মুসলিম হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন না। তবে তার এই মন্তব্য ভালোভাবে নেয়নি নয়াদিল্লি। এমনকি খামেনির এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে মোদি সরকার।
এনডিটিভির খবর অনুযায়ী, ভারতের মুসলিমদের দুর্দশার কথা গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে তুলনা করেছেন খামেনি। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর দিনে এই তুলনা করেন তিনি। তবে তার এই বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
সোমবার সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেয়া পোস্টে খামেনি বলেন, মিয়ানমার, গাজা, ভারত বা অন্য যেকোনো স্থানে মুসলমানরা যে দুর্দশার মধ্যে আছেন, সে সম্পর্কে আমরা যদি উদাসীন হয়ে যাই তাহলে আমরা নিজেদের মুসলিম হিসেবে বিবেচনা করতে পারি না। ইসলামের শত্রুরা সর্বদাই মুসলিম উম্মাহ হিসেবে আমাদের যৌথ পরিচয়ের ব্যাপারে আমাদের উদাসীন করার চেষ্টা করেছে।
তার এই এক্সবার্তার পর এক বিবৃতিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আমরা ভারতে সংখ্যালঘুদের নিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার করা মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। এগুলো ভুল তথ্য ও অগ্রহণযোগ্য। যেসব দেশ সংখ্যালঘুদের বিষয়ে মন্তব্য করছে, তারা যেন অন্যদের নিয়ে পর্যবেক্ষণ দেয়ার আগে নিজেদের কর্মকাণ্ডের দিকে নজর দেয়।
আপনার মন্তব্য লিখুন