সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ঢুকে পড়েছে বিদ্রোহীরা। তার আগেই প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিমানে করে দামেস্ক ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছেন। রবিবার (৮ ডিসেম্বর) দুজন জ্যেষ্ঠ সিরীয় কর্মকর্তার বরাতে এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এ প্রসঙ্গে বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য প্রোগ্রামের সিনিয়র ফেলো নাতাশা হল বলেন, “মনে হচ্ছে, সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের অত্যাচারের অবসান হয়েছে।”
তিনি ১৯৭০ এর দশকের শুরুতে আসাদ পরিবারের শাসনের কথা উল্লেখ বলেন, “এটা সত্যিই মনে হচ্ছে যে, আমরা সিরিয়ায় ৫৪ বছরের অত্যাচারের শেষ ঘণ্টায় রয়েছি।”
নাতাশা হল আরো বলেন, “প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দামেস্ক ছেড়ে গেছেন বলে মনে হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “বিদ্রোহীদের হাতে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের পতনের ঘটনাটি নানা ঘটনার সংমিশ্রণের ফলাফল, যার মধ্যে রয়েছে ইরান ও রাশিয়াসহ আসাদের মিত্রদের বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ‘দুর্বল এবং বিভ্রান্ত’ হয়ে পড়া।”
তিনি যোগ করেন, ‘সিরিয়ার ৯০ শতাংশ মানুষ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছিল। অসংখ্য মানুষ বাস্তুচ্যুত শিবিরে অস্থির জীবনযাপন করছিল। আমি মনে করি, মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল।”
প্রসঙ্গত, বাশার আল-আসাদ ২০০০ সাল থেকে সিরিয়ার ক্ষমতায় রয়েছেন। এর আগে তার বাবা হাফেজ আল-আসাদ ২৯ বছর দেশটি শাসন করেছিলেন।
২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই সময় বিক্ষোভকারীদের দমনে কঠোর পন্থা অবলম্বন করেন তিনি। এরপর বিক্ষোভকারীরা সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেন। এতে করে দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ।
পরবর্তীতে বাশার আল আসাদকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে রাশিয়া, ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহ। এতে বিদ্রোহীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লেবাননের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়ে যাওয়া, ইরান তার চিরশত্রু ইসরায়েলের দিকে মনোনিবেশ ও ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার ব্যস্ত থাকার সুযোগে বিদ্রোহীরা আবারও তৎপর হয়ে উঠে। সম্প্রতি বিদ্রোহীরা সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র হামলা শুরু করে এবং এই হামলার মুখে আজ রবিবার নাটকীয়ভাবে দামেস্ক ছেড়ে প্রেসিডেন্ট আসাদ পালিয়েছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচএস) জানিয়েছে, রাজধানী দামেস্কে সিরিয়ান সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর শতাধিক সদস্যকে তাদের সামরিক ইউনিফর্ম খুলে ফেলতে দেখা গেছে, কারণ তাদের বলা হয়েছে, সরকার পতনের কারণে তারা চাকরি থেকে অব্যাহতি পেয়েছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে থাকবে: সিরিয়ার বিদ্রোহীরা
ব্যক্তিগত বিমানে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। তার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-জালালি বলেছেন, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত যেকোনো নেতৃত্বকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
রবিবার (৮ ডিসম্বের) সিএনএন এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
টেলিগ্রামে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা দামেস্ককে (সিরিয়ার রাজধানী) অত্যাচারী বাশার আল-আসাদের হাত থেকে মুক্ত ঘোষণা করছি। সিরিয়া এখন মুক্ত। একটি অন্ধকার যুগের সমাপ্তি হলো। একটি নতুন যুগের সূচনা হলো।”
টেলিগ্রামে পৃথক আরেকটি পোস্টে এইচটিএস বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী আপাতত সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবেন।
এইচটিএস নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি টেলিগ্রামে ঘোষণা করেছেন, শহরের সামরিক বাহিনীর জন্য দামেস্কের সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে যাওয়া নিষিদ্ধ। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর না হওয়া পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে থাকবে।
রেকর্ড করা এক ভিডিও বার্তায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই দেশ একটি স্বাভাবিক দেশ হতে পারে। সরকারি কার্যক্রম সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিক স্থানান্তর নিশ্চিত করতে, রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা সংরক্ষণের জন্য জনগণ যেকোনো নেতৃত্বকে বেছে নেবে তাকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’’
সরকারি সম্পদ ধ্বংস থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সরকারি সম্পদ ক্ষতি না করতে আমি সব নাগরিকের প্রতি অনুরোধ করছি। কারণ শেষ পর্যন্ত এটা আমাদেরই সম্পদ।’’
এইচটিএস এক বিবৃতিতে দেশের সম্পদ রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে।