ইসরায়েলের সঙ্গে যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে- এমন আশঙ্কায় আগামী তিন মাসের জন্য একটি জরুরি পরিকল্পনা তৈরি করেছে লেবানন। মূলত যুদ্ধ শুরু হলে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে সেই বিষয়ে এই পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি।
রবিবার কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার আরবি সংস্করণকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে অবিলম্বে গাজা যুদ্ধ বন্ধে বিশ্ব নেতাদের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন লেবাননের এই প্রধানমন্ত্রী।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রত্যেক দিনই লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বর্বর হামলার প্রতিশোধে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে সামরিক ও ব্সোমরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা বাড়িয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ।
রবিবার দিনভর হিজবুল্লাহর রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলি সাত সৈন্য ও কয়েকজন বেসামরিক গুরুতর আহত হয়েছেন। হিজবুল্লাহর হামলার জবাবে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে যুদ্ধবিমান থেকে পাল্টা হামলা ও গোলাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এই অবস্থায় মিকাতি বলেছেন, “আমরা সংযম চালিয়ে যাচ্ছি এবং ইসরায়েলকে অবশ্যই দক্ষিণ লেবাননে তার উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা যুদ্ধ চাই না এবং লেবানন আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যে কারণে আমরা এই অঞ্চলে আরেকটি যুদ্ধ শুরু করার মতো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবো না।”
লেবাননের এই তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিজবুল্লাহর অবস্থানের প্রশংসা করে বলেছেন, “এখনও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে এবং আমরা আশা করছি, তেল আবিবের সাথে যোগাযোগের ফলে দেশের দক্ষিণে ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হবে।”
তিনি বলেন, হিজবুল্লাহ অত্যন্ত দেশপ্রেমিক আচরণ করছে এবং আমি তাদের বিশ্বাস করি। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- লেবাননকে যুদ্ধ থেকে দূরে রাখা। আমরা সবসময় স্থিতিশীলতা চেয়েছি।
আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মিকাতি বলেছেন, “আমরা অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি জানাই। গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা ও গণহত্যা বন্ধ করা উচিত। সেখানে যে ধরনের গণহত্যা চলছে তা কেউই মেনে নিতে পারবে না।”
তিনি আল-শিফা হাসপাতাল ও এর ভেতরে থাকা ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় উপত্যকায় কর্তব্যরত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। উপত্যকার হাসপাতালগুলোতে ইসরায়েলি হামলা যুদ্ধাপরাধের শামিল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স
সৌদি থেকে ফিরে গাজা প্রসঙ্গে যা বললেন এরদোয়ান
সৌদি আরবে ওআইসি এবং আরব লীগের সম্মেলনে যোগ দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। রবিবার সেখান থেকে ফিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
এরদোয়ান বলেন, ইসরায়েলি বর্বতার মুখে কোনো বিবেকবান মানুষ চুপ করে থাকতে পারে না। প্রথম দিন থেকেই আমি ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠস্বর হওয়ার চেষ্টা করেছি এবং গাজায় গণহত্যা বিশ্বকে দেখানোর চেষ্টা করেছি। আমি ফোন কূটনীতিতে নিয়োজিত আছি এবং অন্যান্য দেশ সফর করছি।
এরদোয়ান বলেন, মানবিক যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে গত ৭ অক্টোবর সংঘাতের নতুন পর্যায় শুরু হওয়ার পর থেকে কূটনীতি ও সংলাপে নিয়োজিত রয়েছি। গাজায় সরবরাহের জন্য মিশরে প্রায় ২৩০ টন মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, তুরস্কের একটি বড় জাহাজও আরও সহায়তার জন্য মিশরের পথে রয়েছে।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, গণহত্যার মুখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। জাতিসংঘসাধারণ পরিষদের ২৭ অক্টোবরের অধিবেশনে যুদ্ধবিরতি ও নিঃশর্ত মানবিক সহায়তা প্রদানের পক্ষে ১২১টি দেশ ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু আবারও আমরা দেখতে পাচ্ছি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ অকার্যকর।’
বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে গাজায় ‘যুদ্ধবিরতি’ চাইলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন সফরে গেছেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো। সেখানে তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে জেকো উইদোদো গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
উইদোদো বলেন, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি এবং ত্বরাণ্বিত করতে হবে। তিনি সমঝোতামূলক শান্তি আলোচনা শুরু করারও আহ্বান জানান।
বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশটির প্রেসিডেন্ট বলেন, ফিলিস্তিনিদের সীমাহীন ভোগান্তির মুখে মনে হচ্ছে বিশ্ব সম্প্রদায় ‘অসহায়’। যৌথ ইসলামিক আরব সম্মেলন থেকে ইসরায়েল গাজায় যে যুদ্ধ অপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করছে তার তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।
আপনার মন্তব্য লিখুন