মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)’ দাবি করেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৬ জুলাই থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮৭৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ।
শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য তুলে ধরে এইচআরএসএস। ১২টি জাতীয় দৈনিক, এইচআরএসএসের তথ্য অনুসন্ধানী ইউনিট ও সারাদেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে ৭৭ শতাংশই গুলিতে মারা গেছেন।
এছাড়া অভ্যুত্থানে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এতে আরও বলা হয়, মোট ৭৭২ জনের মৃত্যুর ধরন সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৯৯ জন বা ৭৭ শতাংশ গুলিতে নিহত হয়েছেন। ৬১ জন (৮ শতাংশ) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
৮৫ জনকে (১১ শতাংশ) পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। অন্যান্য কারণে মারা গেছেন ২৭ জন (৪ শতাংশ)।
এইচআরএসএস জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের একাংশের বয়স, পেশা, মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩২৭ জন এবং ৪ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (অনেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরে মারা যান) ৫৪৮ জন নিহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ৭৭ শতাংশ গুলিতে মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে ১৯ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মৃত্যুহার ৫৩ শতাংশ। আর ৩০ বছরের মধ্যে বয়স ধরলে, নিহতের হার দাঁড়ায় ৭০ শতাংশে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী, এ হার ৫২ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন গুলিতে এবং পুলিশের হামলায়।
এইচআরএসএস আরও জানিয়েছে, ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য আদেশ দেওয়া হয়। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, আনসার, সোয়াট, বিজিবি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলির বেআইনি ব্যবহার, টিয়ার গ্যাসের শেল, এ কে অ্যাসল্ট রাইফেলের মতো প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তালিকায় নিহত ৬৩১, আহত ১৯ হাজার
গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৬৩১ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ১৯ হাজার ২০০ জনের বেশি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বা এমআইএস শাখা থেকে প্রস্তুত খসড়া প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এমআইএস শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তথ্য নিয়ে এ তালিকা করা হয়েছে। এর একটি অনুলিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ তালিকা নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে।
গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত হতাহতের তথ্য তালিকায় রয়েছে রয়েছে বলে জানা গেছে। খসড়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি নিহত ও আহত হয়েছেন। এ বিভাগে ৪৭৭ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন ১১ হাজার। সারা দেশে আহত হয়ে যারা হাসপাতালে গেছেন, তাদের ৩ হাজার ৪৮ জনের অবস্থা ছিল গুরুতর। তাদের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। কমপক্ষে ৫৩৫ জন স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছেন। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৪৫০ জনকে হাসপাতালে আনা হয় মৃত অবস্থায়। বাকি ১৮১ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
গত ১৫ আগস্ট আন্দোলনে হতাহতের তালিকা করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির এ কমিটির প্রধান। এ কমিটির তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখা তালিকাটি তৈরি করছে।
মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, তালিকার কাজ এখনও চলছে। আন্দোলনের সময় মামলার ভয়সহ নানা কারণে নিহত অনেককে হাসপাতালে আনা হয়নি। এ কারণে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ভারতীয় গণমাধ্যমে ছাত্র আন্দোলনে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এমনটা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (বর্তমানে পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টা) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন। ভারতীয় গণমাধ্যম নর্থইস্ট নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
মুঠোফোনে ৪৫ মিনিটের এক সাক্ষাতকারে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে প্রাণঘাতী অস্ত্র দিয়ে পুলিশ বাহিনী যাদের হত্যা করেছে তাদের বেশির ভাগই তরুণ ও শিক্ষার্থী। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে এসব শিক্ষার্থী নিহত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষমতার জন্য শেখ হাসিনা মানুষের জীবনের কোনো পরোয়া করতেন না। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও এই হত্যাযজ্ঞে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য জড়িত।’
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর অসংখ্য পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন জানিয়ে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের শান্ত করতে টানা পাঁচ ঘণ্টা তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হয়েছে। তাদের কাছে বিভিন্ন বিষয় জানতে চাওয়া হয়। এক পর্যায়ে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন।’
তিনি ভারতের উদ্দেশে বলেন, ‘ভারত সরকারের প্রতি আমার বার্তা হলো, আপনারা কি ঢাকায় বন্ধুত্বপূর্ণ নাকি শত্রুভাবাপন্ন একটি সরকার দেখতে চান?’