জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশন এবং অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত ৩টার দিকে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন অধ্যাপক ইউনূস।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী কাতার এয়ারওয়েজের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৩০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়ে।
অধ্যাপক ইউনূসের জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান এবং নিউইয়র্ক সফর নিয়ে তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশের কোনো সরকারপ্রধানের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের সবচেয়ে সফলতম সফর ছিল এবার।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ ১২টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সাইড লাইনে ৪০টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন।
সফরকালে প্রধান উপদেষ্টার ব্যাপক কর্ম-তৎপরতা বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিশ্বের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং অংশীদারত্ব এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক পৌঁছেন। তিনি চার দিনের সফরকালে খুবই কর্মব্যস্ত সময় পার করেন।
বাংলাদেশ সরকারকে পূর্ণ সমর্থন জানালেন জো বাইডেন
বাংলাদেশ সরকারকে ‘পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় বাইডেন তার সরকারের এই সমর্থন ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে ড. ইউনূস বিগত সরকারের আমলে সকল ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা ও বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা জো বাইডেনকে জানান। অধ্যাপক ড. ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, দেশ পুনর্গঠনে তার সরকারকে অবশ্যই সফল হতে হবে। এসময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেকোনো সাহায্যে বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি দেশের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, তাহলে তাদেরকেও (যুক্তরাষ্ট্র সরকার) পূর্ণ সহযোগিতা করা উচিত।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই বিপ্লব চলাকালীন ও এরপর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রের ছবি-সংবলিত ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ শীর্ষক আর্টবুক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে উপহার দেন।
তথ্য সূত্র: বাসস
ড. ইউনূস ও জাস্টিন ট্রুডো একান্ত বৈঠক
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালীন মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
সংক্ষিপ্ত এ বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশ-কানাডা সম্পর্ক আরো সুদূঢ় করার উপায়, জনসাধারণের স্বাধীনতা আরও বিস্তৃত করা, প্রতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং বাংলাদেশের যুবসমাজকে সহায়তা করার বিষয়ে আলোচনা করেন।
এ সময় অধ্যাপক ইউনূস কানাডার প্রধানমন্ত্রীর হাতে ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি শিল্পকলা বই উপহার দেন, যেখানে বাংলাদেশে বিপ্লব চলাকালীন এবং পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থী ও তরুণদের আঁকা বর্নিল গ্রাফিতি স্থান পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগের শাসন ব্যবস্থা দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে ধ্বংস করেছিল বৈঠকে ড. ইউনূস তা তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশের প্রতি কানাডার বন্ধুত্ব এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কানাডা সরকারের সমর্থনের জন্য প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অরো ভিসা প্রদানের জন্য কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা মঙ্গলবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের কর্মসূচি শুরু করেন।
তিনি সংবর্ধনায় বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া তিনি জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন।
তথ্য সূত্র: বাসস
বিল ক্লিনটনের সঙ্গে ড. ইউনূসের কুশল বিনিময়
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া উপহার ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ হাতে বিল ক্লিন্টন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অনুষ্ঠানে তাদের সাক্ষাৎ হলে কুশল বিনিময় করেন তারা।
এসময় প্রধান উপদেষ্টা জুলাই বিপ্লব চলাকালীন ও এরপরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রের ছবি সংবলিত ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ শীর্ষক আর্টবুক বিল ক্লিনটনকে উপহার দেন। পরে ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভে বক্তব্য দেন ড. ইউনূস।
এর আগে, সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘে ড. ইউনূসের সঙ্গে উচ্চ-পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের সভায় বক্তব্য দেন।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার অত্যাচারের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগণের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন নিয়ে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিয়ে প্রথম দিনেই রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা করেন তিনি। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় দুপুর ৩টায় অনুষ্ঠিত সভাটির সহ-আয়োজক ছিল ইন্দোনেশিয়া, গাম্বিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
কী-নোট স্পিকার হিসেবে ড. ইউনূস তার বক্তৃতায় তিনটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিবকে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় দ্রুত কনফারেন্স আয়োজন করতে হবে, যা সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সৃজনশীল ও কার্যকরী পন্থা নির্ধারণ করবে। দ্বিতীয়ত জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের ‘জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান’কে আরও বেগবান করতে হবে এবং শেষদিকে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গণহত্যার মতো অপরাধের বিচার ও জবাবদিহিতায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন চাইতে হবে।
এসময় ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, বাংলাদেশ প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে এবং প্রতিবছর ৩২ হাজার নতুন শিশু জন্ম নিচ্ছে। সম্প্রতি ২০ হাজার নতুন শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত চাপ তৈরি করছে, যা নিরাপত্তা ঝুঁকিরও জন্ম দিচ্ছে।
অধ্যাপক ড. ইউনূসে আরও বলেন, জাতিসংঘের বিভিন্ন মহল মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু সংকটের মূল সমস্যার সমাধান না হওয়ায় তা কার্যকর হয়নি। তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষায় অংশীজনদের সাথে কাজ করার বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে সংকটের উত্তরণের বার্তা দেন।
নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী কাতার এয়ারওয়েজের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্ক সময় রাত ১০টা ১০ মিনিটে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ডি এম সালাউদ্দিন মাহমুদ বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টাকে অভ্যর্থনা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সাধারণ পরিষদ হলে পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের সাধারণ আলোচনায় যোগ দেবেন। তিনি ২৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি ড. ইউনূস বেশ কয়েকজন সরকারপ্রধান ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রধানের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন।
নিউইয়র্কে জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে বৈঠকে বসেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় তাদের এই বৈঠক শুরু হয়।
জানা গেছে, শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ইস্যু, সীমান্ত হত্যা, পানি ব্যবস্থাপনা, ইলিশ রপ্তানি, বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতীয় ভিসা না দেওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সত্য-মিথ্যার মিশ্রণে নানা তর্ক-বিতর্ক চলছে। এ নিয়ে ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এমন পরিস্থিতিতে এই সংশ্লিষ্ট সবগুলো বিষয়েই আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল।এর আগে, ঢাকায় গত শনিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটু টানাপড়েন চলছে। এটা কিন্তু স্বীকার করতে হবে। সমস্যা সমাধান করতে হলে অস্বীকার করলে চলবে না। আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব সেই টানাপড়েন যেন পেছনে ফেলতে পারি এবং একটি কাজের সম্পর্ক তৈরি হয়।
আপনার মন্তব্য লিখুন