সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে আজ ভোর থেকেই নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে। নেতাকর্মীদের মিছিল, শ্লোগানে মুখরিত হয়েছে গোটা নয়াপল্টন এলাকা। তাদের হাতে দলীয় ও জাতীয় পতাকা শোভা পাচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কয়েক হাজার নেতাকর্মী ভোর থেকে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় তাদের খণ্ড খণ্ড মিছিল করতে দেখা যায়। সেসব মিছিল থেকে সরকারবিরোধী ও বিএনপির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। এরই মধ্যে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে পল্টন থানা পর্যন্ত কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে।
এদিকে, নেতা-কর্মীদের অবস্থানের কারণে নয়াপল্টনে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত এক পাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অন্য পাশেও খুবই সীমিত আকারে চলছে রিকশা ও মোটরসাইকেলের মতো যানবাহন।
বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা সৃষ্টি না হয় সেজন্য নয়াপল্টনে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। শতাধিক পুলিশ সদস্যকে নয়াপল্টনের বিভিন্ন মোড়ে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। পাশাপাশি পুলিশের সাঁজোয়া যানও দেখা গেছে।
এদিকে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সামনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ মহাসমাবেশের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ করেছে দলটি। দলীয় কার্যালয়ের সামনে আটটি পিকআপ ভ্যান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মহাসমাবেশের মঞ্চ। লাগানো হয়েছে ব্যানার।
বিএনপির এ মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয় নেতারা। সভাপতিত্বে করবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সঞ্চালনা করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদ।
নয়াপল্টনের মহাসমাবেশে জড়ো হয়েছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা
সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে ডাকা নয়াপল্টনের মহাসমাবেশে জড়ো হয়েছে বিএনপির নেতা-কর্মী, সমর্থকেরা।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর ২টায় রাজধানীতে মহাসমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল ১১টার মধ্যে সমাবেশস্থল এবং এর আশপাশের সড়ক, গলি, চৌরাস্তাসহ সড়কসংযোগ ও ফাঁকা জায়গায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন।
সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, মৎসভবন এলাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের মিছিল করতে দেখা যায়। সেগুনবাগিচা মাদকনিয়ন্ত্রণ অধিদফরের মোড়, শিল্পকলা একাডেমির উত্তর গেট, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, কাকরাইল মোড়, বিজয়গনর মোড়, নাইটিঙ্গেল মোড়, কালভার্টরোড, বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনের সড়কসহ আশপাশের সড়কে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিত চোখে পড়ে। খালেদা জিয়ার মুক্তি, প্রধামন্ত্রীর পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন তারা।
সমাবেশে অংশ নিতে আসা এসব নেতা-কর্মীর হাতে বিএনপির দলীয় পতাকা, নিজ নিজ ইউনিটের দায়িত্বশীল নেতাদের সৌজন্যে পাওয়া ছবি সম্বলিত টি শার্ট, ক্যাপ, হেডার, হেড ব্যাজ, ব্যানার, ফেস্টুন রয়েছে। কেউ কেউ শরীরের দলীয় পতাকার ট্যাটু করে সমাবেশে অংশ নিয়েছেন।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর অনেক রাস্তায় যান চলাচল কম দেখা গেছে। সড়কে গণপরিবহন ছিল হাতেগোনা। অনেককেই অপেক্ষা করতে দেখা যায় গণপরিবহনের জন্য। সুযোগ বুঝে রিকশা চালকের ভাড়া নিচ্ছেন দিগুণ- এমন অভিযোগ সাধারণ যাত্রীদের।
এদিকে শনিবার ভোর থেকেই রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং এর আশপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে তারা। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।
সমাবেশস্থল নয়াপল্টনে পশ্চিম পাশ ছাড়াও পূর্ব পাশে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থি হয়েছেন। রাজধানীর কমলাপুর, পুরানা পল্টন, শাহজাহানপুর এলাকা দিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। অনেকেই আবার সমাবেশ স্থল থেকে অনেক দূরে অনুসারীদের নিয়ে অবস্থান করছেন। কিছুক্ষণ পর পর মিছিল নিয়ে রাউন্ড দিচ্ছেন তারা।
বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন, কাকরাইল, বিজয়নগর এবং এর আশপাশের এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে উজরা জেয়ার সঙ্গে সালমান এফ রহমানের বৈঠক
যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
উজরা জেয়া এবং সালমান এফ রহমান তাদের নিজ নিজ টুইটার একাউন্টে বৈঠকের তথ্য প্রকাশ করেছেন।
সালমান এফ রহমান জানান, উজরা জেয়ার সঙ্গে দেখা করে আনন্দিত। আমরা বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বাড়ানোসহ বিস্তৃত দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা একমত যে গণতন্ত্রে সরকার পরিবর্তনের একমাত্র উপায় নির্বাচন। আসন্ন নির্বাচন যেন অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়, সে বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি। আন্ডার সেক্রেটারি জেয়া নিশ্চিত করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না বরং বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা দেখতে আগ্রহী।
টুইটারে উজরা জেয়া বলেন, সালমান এফ রহমানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কথোপকথন হয়েছে। আমাদের ভাগ করা উদ্বেগের ব্যাপারে একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদান, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার বিষয়।
উল্লেখ্য, গত ১১-১৪ জুলাই উজরা জেয়া ঢাকা সফর করেন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং ইউএসএইডের এশিয়া ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিটেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রের অঞ্জলী কৌর।