গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দেশীপাড়া এলাকায় এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা পরিচয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিপক্ষকে জমির খুঁটি তুলে ফেলার জন্য হুমকি দিয়েছেন রাশেদুজ্জামান মাসুম। তিনি নিজেকে নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী বলে পরিচয় দিয়েছেন এবং অস্ত্রেরও লাইসেন্স আছে বলে দাবি করেছেন।
ভুক্তভোগী হারুন অর রশিদ জানান, দেশীপাড়া মৌজায় তার নানার কাছ থেকে ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত ১ একর ৪২ শতাংশ জমি রাশেদুজ্জামান মাসুম ও তার পরিবারের লোকজন অন্যায়ভাবে দখল করে রেখেছেন। এ বিষয়ে আগে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়ে আপস-মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও মাসুম গং তাতে কর্ণপাত করেনি।
এমতাবস্থায় তারা গাজীপুর সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে বিবিধ মিস মোকদ্দমা করে সম্প্রতি রায় পান। সে অনুযায়ী গত শনিবার সকালে তিনি পরিবারের লোকজন নিয়ে সার্ভেয়ার দ্বারা ওই জমি মেপে খুঁটি পুঁততে গেলে রাশেদুজ্জামান মাসুমসহ তার লোকজন সশস্ত্র অবস্থায় বাধা দেন। তারা শটগান উঁচিয়ে জমিতে পোঁতা খুঁটি তুলে ফেলতে এবং জমি থেকে চলে যেতে বলেন। মাসুম শটগান দিয়ে গুলি করারও হুমকি দেন। হারুন অর রশিদ জানান, একপর্যায়ে তাকে ওই জমি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে তিনি এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে রাশেদুজ্জামান মাসুম বলেন, ‘আমি পৈতৃক ওয়ারিশমূলে ওই জমির মালিক। আমার নিরাপত্তার জন্য লাইসেন্স করা অস্ত্র হাতে করে আমি ওইখানে গেছি। তবে হারুনকে আমি গুলি করার কোনো হুমকি দেইনি।’ মাসুম দাবি করেন, তার ১২ বোরের শটগানটির লাইসেন্স আছে। তিনি নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী বলেও জানান। এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সঞ্জিত কুমার মল্লিক বাবু বলেন, ‘গাজীপুর মহানগরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি আছে।
ওই কমিটিতে রাশেদুজ্জামান মাসুম নামে কেউ নেই। তিনি আমাদের সংগঠনের কেউ না, সাধারণ সদস্যও না। তাকে আমি চিনিও না। তার দাবি মিথ্যা ও বানোয়াট। সাংগঠনিকভাবে এ ধরনের মানুষের কোনো দায়ভার আমরা নেব না। সংগঠনের কেউ না হয়েও সে যদি নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ রাফিউল করীম বলেন, শটগান নিয়ে জমি মাপার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি আমার নজরেও এসেছে। এরপর গতকাল ওই অস্ত্র সিজ (জব্দ) করেছি। লাইসেন্স বাতিলের জন্য আমরা লিখব। তিনি আরও জানান, হারুন অর রশিদ পক্ষের কাছ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগ নেতাকে যৌন নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতে হত্যা
নিজের ওপর যৌন নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুদ্দিনকে হত্যা করেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন অভিযুক্ত যুবক আশরাফুল ইসলাম (২০)। মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে কক্সবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুদ্দীন হত্যার রহস্য উন্মোচনে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম।
পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম জানান, আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুদ্দিনের সঙ্গে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে পরিচয় হয় আশরাফুল ইসলামের। গত রবিবার বিকেলে বড় বাজার থেকে দেশীয় মদ ও পেয়ারা কিনে হলিডে মোড়ের হোটেল সানমুনের ২০৮ নম্বর কক্ষে ওঠেন তারা। সেখানে দেশীয় মদ ও পেয়ারা খাইয়ে মাদ্রাসাছাত্র আশরাফুলকে একপর্যায়ে যৌন নির্যাতন করেন সাইফুদ্দিন। যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিজের মোবাইলে ভিডিও করেন সাইফুদ্দিন। পরে মোটরসাইকেলে করে তাকে গোলদিঘির পাড়ে নামিয়ে ১০০ টাকা দিয়ে চলে যেতে বলেন।
এর এক ঘণ্টা পর সাইফুদ্দিন আবারও ফোন করে আশরাফুলকে হোটেলে ডাকেন। সেখানে আবারও তাকে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা করেন সাইফুদ্দিন। তখন যৌন নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতে প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে এবং পরে ছুরিকাঘাতে সাইফুদ্দিনকে হত্যা করেন আশরাফুল ইসলাম। ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় টেকনাফের হোয়াইক্যং থেকে আশরাফুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ।
এর আগে, সোমবার (২১ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে টেকনাফ হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির চেকপোস্টে পালকি নামে একটি বাস থেকে আশরাফুল ইসলামকে আটক করা হয়। তিনি কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়তলী ইসলামপুর এলাকার মোহাম্মদ হাশেম মাঝির ছেলে। তিনি ওই এলাকার ওয়ামি একাডেমি নামে একটি মাদ্রাসার ছাত্র। নিহত সাইফুদ্দিন কক্সবাজার শহরের ঘোনারপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত আনসার কমান্ডার আবুল বশরের ছেলে। তিনি কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এবং কাদেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি।
সোমবার (২১ আগস্ট) সকালে কক্সবাজার শহরের আবাসিক হোটেল সানমুনের ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে দুই হাত বাঁধা অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রবিবার (২০ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাদা পাঞ্জাবি ও মাস্ক পরিহিত এক যুবককে সঙ্গে নিয়ে হোটেলটিতে গিয়েছিলেন সাইফুদ্দিন। রাত ৮টা ১০ মিনিটের পর ওই যুবক চলে যান। হোটেলটির সিসিটিভি ফুটেজে বিষয়টি দেখা গেছে। ঘটনার পর ওই যুবকের পরিচয় জানতে উদগ্রীব হয়ে পড়েন পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা। তাকে শনাক্ত করতে জোর তৎপরতা শুরু করে পুলিশ। পরে সোমবার রাতে তাকে আটক করা হয়।
আপনার মন্তব্য লিখুন