মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রাজধানী সিত্তয়ে’তে খুব শিগগিরই জান্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালাতে পারে আরাকান আর্মি (এএ)। এ খবরে শহর ও এর আশপাশের গ্রাম থেকে হাজার হাজার বাসিন্দা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়ে যাচ্ছেন। খবর নারিনজারা।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘সিত্তয়ে’কে দখল করবে আরাকান আর্মি— এমন খবর শুনে তারা পালিয়ে যাচ্ছে। এখন আরও বেশি মানুষ মুক্ত এলাকায় চলে যাচ্ছে।’
রাখাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নারিনজারা জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই একটি মাইন হামলার মাধ্যমে ইয়াঙ্গুন-সিত্তয়ে মহাসড়কের আ মিন্ট কিয়ুন মিন চাউং ব্রিজ ধ্বংস করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। যাতে এএ যোদ্ধারা সিত্তয়ে এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে। যা জনসাধারণের উদ্বেগকে বাড়িয়ে তুলেছে।
বাসিন্দা আরও বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি ধ্বংস করার ফলে শহরের বাসিন্দাদের সফলভাবে আটকে রাখা হয়েছে। ফলে যুদ্ধ চলাকালে পালানোর বিষয়ে শঙ্কিত তারা। তাই এখন হাতে সময় নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন বাসিন্দারা।’
শুধু বেসামরিক মানুষই নয়, সামরিক কর্মকর্তা ও অন্যান্য দফতরের কর্মকর্তাদের পরিবারও শহরটি ছেড়েছে চলে যাচ্ছেন। এদিকে আরাকান আর্মি’র যোদ্ধারা বর্তমানে পোন্নাগিউন শহর দখলের জন্য জান্তা বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে। কামানের গোলা শহরের বিদ্যুতের সাবস্টেশনে আঘাত করে। এর ফলে সিত্তয়ে’র অনেক বাসিন্দা দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ বিহীন ছিলেন।
অপর এক বাসিন্দা বলেন, ‘সিওয়ে শহরে ইন্টারনেট এবং ফোন সংযোগ সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। আমরা শুধুমাত্র মাইটেল পরিষেবার মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি। বিদ্যুৎ না থাকায় ফোন চার্জ করতে পারছি না। এছাড়া জ্বালানির দামও বাড়ছে। এখন আসন্ন সংঘাতের খবরে মানুষ পালাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই নৌকায় করে পালিয়ে গেছেন। নদীর ওপারে যেতে জনপ্রতি কমপক্ষে ৫০ হাজার কিয়াট ব্যয় করতে হয়েছে।’
তবে সিত্তয়ে থেকে পালাতে নাগরিকদের বাধা দিচ্ছেন জান্তা বাহিনী। সেনা ও পুলিশ সদস্যরা সিত্তয়ে’র পূর্ব দিকে কালাদান নদীর ধারে বাঙ্কার তৈরি করেছেন এবং নজরদারি বাড়িয়েছেন। তাই রাতের বেলা ছোট নৌকায় করে নদী পার হচ্ছেন বাসিন্দারা।
জান্তা সৈন্যরা সম্ভবত বাসিন্দাদের মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে এবং তাই তারা জনসাধারণের চলাচলে বাধা দিচ্ছে বলে ধারণা করছেন তারা।
রাখাইন অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে গত বছরের ১৩ নভেম্বর থেকে জান্তা বাহিনী ও এএ যোদ্ধারা যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত ৯টি শহরের পাশাপাশি জান্তার সামরিক ঘাঁটি, পুলিশ স্টেশন, কৌশলগত অপারেশন কমান্ড ঘাঁটি এবং ব্যাটালিয়নের নিয়ন্ত্রণ দখল করেছেন এএ যোদ্ধারা।
আরাকান আর্মির হামলায় নিহত ৮০ মিয়ানমার সেনা
বিদ্রোহী আরাকান আর্মির (এএ) হামলায় মিয়ানমারের রাখাইনে প্রায় ৮০ জান্তা সেনা নিহত হয়েছে। ওই রাজ্যের রামরি দ্বীপে অবস্থিত রামরি শহরে এই ঘটনা ঘটে।
তিন দিনের লড়াইয়ে এসব সেনা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে রাখাইনের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি।
রাখাইনে আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য গত শনিবার রামরিতে নতুন করে সেনা পাঠায় জান্তা সরকার। শনিবার চারটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে ১২০ সেনা নামে রামরিতে। আরাকান আর্মির দাবি, দুই দিনে এসব সেনার তিন ভাগের দুই ভাগ নিহত হয়েছে।
আরাকান আর্মি বলছে, গত শনিবার এসব সেনার প্রায় ৬০ জন তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে নিহত হয়। এসব সেনার মরদেহ উদ্ধার করার সময় বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করেছে তারা।
বিদ্রোহী আরাকান আর্মি বলছে, শনিবারের পর সোমবার রামরি দ্বীপ থেকে পিছু হটার সময় তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে জান্তা বাহিনীর আরও ২০ সেনা নিহত হয়। তাদের কাছ থেকেও গোলাবারুদ ও খাদ্যসামগ্রী জব্দ করা হয়।
রামরি শহরে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের সশস্ত্র লড়াই শুরু হয় গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। শহরটিতে জান্তা বাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে আরাকান আর্মি হামলা করার পর এ লড়াই শুরু হয়।
আরাকান আর্মি বলছে, এর পর থেকে শহরটিতে বিদ্রোহীদের অবস্থান নিশানা করে জল, স্থল ও আকাশপথে বোমা হামলা চালাচ্ছে জান্তা বাহিনী। জান্তার হামলায় শহরটির অনেক বাড়িঘর ধসে পড়েছে। এছাড়া শহরের একটি হাসপাতাল ও বিপণিবিতানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সূত্র: ইরাবতি
রোহিঙ্গাদের তুলে নিয়ে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দিচ্ছে মিয়ানমার!
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা পুরুষদের গ্রাম ও ক্যাম্প (আইডিপি) থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এসব রোহিঙ্গাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও গণতন্ত্রপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করবে দেশটির জান্তা সরকার।
অধিকারকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারাদের বরাতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, রোহিঙ্গা পুরুষদের যুদ্ধবিধ্বস্ত রাজ্যে পাঠাতে জান্তার সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। রাখাইনের গ্রাম ও ক্যাম্প থেকে কমপক্ষে ৪০০ রোহিঙ্গা পুরুষকে দুই সপ্তাহের প্রাথমিক প্রশিক্ষণের জন্য সামরিক ঘাঁটিতে নেওয়া হয়েছে।
ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নে সান লুইন বলেন, “প্রশিক্ষণের সময়কাল মাত্র দুই সপ্তাহ। জান্তা বাহিনী তাদেরকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে মাত্র দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।”
শহরতলীর বাসিন্দা এবং রোহিঙ্গা কর্মীরা জানিয়েছেন, আরাকান আর্মির (এএ) বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সিতওয়ে ও বুথিদাউং শহরের গ্রাম এবং আইডিপি ক্যাম্প থেকে ইতোমধ্যে অন্তত ৪০০ রোহিঙ্গা পুরুষকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে জান্তা বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
১০ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনীতে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষদের বাধ্যতামূলক কাজ করার আইন করার পর থেকে জান্তা এই প্রক্রিয়া শুরু করে। সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতাদের এবং প্রশাসকদের গ্রাম এবং বুথিডাং, মংডু ও সিতওয়ে আইডিপি ক্যাম্পে পুরুষদের তালিকা তৈরি করার জন্য চাপ দিয়েছে। প্রতিটি ছোট গ্রামের জন্য কমপক্ষে ৫০ পুরুষ এবং প্রতিটি আইডিপি ক্যাম্প ও বড় গ্রাম থেকে কমপক্ষে ১০০ পুরুষের তালিকা তৈরি করার কথা বলা হয়েছে।
নে সান লুইন বলেন, “বুধবার আমরা যা নিশ্চিত হতে পেরেছি তা হচ্ছে, সিতওয়ের আইডিপি ক্যাম্প থেকে অন্তত ৩০০ জনের খসড়া করা হয়েছে এবং তারা এখন (সামরিক) প্রশিক্ষণের মাঠে রয়েছে।”
জান্তা সেনারা ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি বুথিডাং শহরতলীর চারটি গ্রাম থেকে কমপক্ষে ১০০ জনকে গ্রেফতার করেছে এবং তাদের প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য নিকটবর্তী একটি সামরিক ঘাঁটিতে পাঠিয়েছে বলে জানান লুইন।
প্রসঙ্গত, নতুন সেনা নিয়োগ আইন শুধুমাত্র মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না।
রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা বাসিন্দা এবং অধিকারকর্মীরা জানিয়েছেন, সামরিক জান্তা রোহিঙ্গা পুরুষদের বলেছে যে তারা সেনাবাহিনীতে চাকরি করলে প্রত্যেকে এক বস্তা চাল, একটি নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র এবং মাসিক এক লাখ ৫০ হাজার কিয়াট (৪১ ডলার) বেতন পাবে।
সূত্র: দ্য ইরাবতি
মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের কনসার্টে বিমান হামলায় গায়কসহ নিহত ৬০
মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য কাচিনে স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আয়োজিত এক কনসার্টে সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় নিহত বেড়ে ৬০ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে দেশটির প্রখ্যাত শিল্পী ও গায়করাও রয়েছেন।
সোমবার স্থানীয় সূত্রের বরাতে আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কাচিনের কানসি গ্রামের ওই হামলায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর তিনটি বিমান অংশ নেয় বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদনে প্রকাশ, হামলার পর ঘটনাস্থলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ দেখা গেছে। খোলা মাঠজুড়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া যানবাহন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। এই হামলায় অন্তত ১০০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য কাচিনের শক্তিশালী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স অর্গানাইজেশনের (কেআইও) ৬২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসাবে শিল্পীরা মঞ্চে পারফর্ম করার সময় ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
আপনার মন্তব্য লিখুন