ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে ভাঙচুরের ঘটনায় বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মাকে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অফিশিয়ালি এর প্রতিবাদ জানানোর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তলব পেয়ে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়াজ হামিদুল্লাহ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত বৈঠক করছেন।
এর আগে ত্রিপুরার ঘটনায় সোমবার (২ ডিসেম্বর) একটি প্রতিবাদপত্র প্রকাশ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, এই ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার বিশ্বাস করে, ত্রিপুরায় বিক্ষোভকারীদের বাংলাদেশি মিশনে আক্রমণ করার সম্মতি দেওয়া হয়েছিল।
এতে আরও বলা হয়, যেহেতু যেকোনও ধরনের অনুপ্রবেশ বা ক্ষতি থেকে কূটনৈতিক মিশনগুলোকে রক্ষা করা স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব, তাই বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে এই ঘটনা মোকাবিলায় অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত এবং ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোর বিরুদ্ধে আরও যেকোনও সহিংসতা রোধ করা এবং কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সুরক্ষারও দাবি জানানো হয়েছে।
মণিপুুরে বাংলাদেশি সন্দেহে ২৯ জন আটক
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে বাংলাদেশি সন্দেহে ২৯ জনকে আটক করা হয়েছে। রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং এ তথ্য জানিয়েছেন। তার দাবি, আটককৃতদের কাছ থেকে আধার কার্ডও পাওয়া গেছে।
উত্তর-পূর্ব ভারতের আরেক রাজ্য আসাম থেকে এসব আধার কার্ড ইস্যু করা হয়েছিল। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের কাছে গোপন সূত্রে খবর আসে, ওই ২৯ জন মায়াং ইম্ফল বেঙ্গুন এলাকায় একটি বেকারি কারখানায় কাজ করেন। সেখান থেকেই তাদের আটক করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আটককৃতদের কাছ থেকে আসামের আধার কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা মণিপুর সরকারের ইনার লাইন পারমিট (আইএলপি) নীতি লঙ্ঘন করেছেন।”
মুখ্যমন্ত্রী জানান, যেহেতু আটককৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া নথিতে আসামের উল্লেখ রয়েছে, তাই তাদের আসাম প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে। রাজস্ব দপ্তরের যে কর্মী ও কর্মকর্তরা ওই ২৯ জনের নামে আইএলপি ইস্যু করেছিলেন, তাদের সাসপেন্ড করা হবে বলে জানান এন বীরেন সিং।
তার মতে, “কেন্দ্রীয় সরকার মণিপুরের মানুষকে আইএলপি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তার একটাই লক্ষ্য, তা হলো- রাজ্যবাসীকে সুরক্ষা প্রদান করা। কিন্তু, যাদের সেই কাজ করতে হবে, তারাই যদি এই ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাহলে এর ফল কী হবে? আমাদের আশঙ্কা, খুব সম্ভবত বাংলাদেশ থেকে বেআইনিভাবে মণিপুরে ঢুকেছেন কিছু মানুষ।”
দেশে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ চেয়ে করা রিট শুনবেন হাইকোর্ট
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় বাংলা টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ চেয়ে দায়ের করা রিট শুনবেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা শাহিন আরা লাইলি এ রিট দায়ের করেন। রিটকারী আইনজীবী জানান- বুধবার রিট আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসতে পারে।
এর আগে, সোমবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় বাংলা টিভি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ চেয়ে; হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করা হয়। ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন- ২০০৬ এর ১৯ ধারা অনুযায়ী ভারতীয় সব টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার নিষিদ্ধ করতে বলা হয়। একইসাথে, বাংলাদেশে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধে কেনো নির্দেশনা দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়।
আদালতে রিটকারীর আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ভারতের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল আইন লঙ্ঘন করে অপপ্রচার চালিয়ে বাংদেশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে।
ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৭
ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় সাতজনকে আটক করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ত্রিপুরার তিন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ত্রিপুরা সরকার মঙ্গলবার তিন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত এবং একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দায়িত্বে অবহেলার দায়ে যে তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তারা হলেন- উপ-পরিদর্শক দিলু জামাতিয়া ও জয়নাল হোসেন এবং সার্জেন্ট দেবব্রত সিনহা। এছাড়া সহকারী কমান্ড্যান্ট কান্তি নাথ ঘোষকে বদলি করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ত্রিপুরার একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় নিউ ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)’ এর ধারায় মামলা করা হয়েছে, যা ডিউটিতে থাকা সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ বা ফৌজদারি শক্তি ব্যবহার, বেআইনি সমাবেশ, দাঙ্গা এবং অপরাধমূলক অনুপ্রবেশ সম্পর্কিত।
তিনি আরো জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন সীমান্ত গোলচক্করের ঝুতন দাস, দশমীঘাটের উজ্জ্বল দাস, অভয়নগরের দীপ্তিনীল ভৌমিক, আগরতলা শহরের উপকণ্ঠের আমতলী এলাকার সুরজা দাস, দক্ষিণ ত্রিপুরার বেলোনিয়ার ঝুলন মালাকার, ৭৯ নং তিল্লা এলাকার প্রদীপ সাহা এবং পশ্চিমের এসডিও চৌমুহনীর অলক মজুমদার ত্রিপুরা।
হামলার ঘটনায় জড়িত অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ত্রিপুরার একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সোমবারের ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বিজেপি সরকার। এ ঘটনায় সাব-ইন্সপেক্টর দিলু জামাতিয়া, দেবব্রত সিনহা ও জয়নাল হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া সহকারী কমান্ড্যান্ট কান্তি নাথ ঘোষকে বদলি করা হয়েছে।’ দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশে হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার বিকেলে ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করছিলেন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে স্মারকলিপি দিতে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে হাইকমিশনের বাইরে অবস্থান করা বিক্ষোভকারারী পুলিশ ব্যারিকেড ভঙ্গ করে ভেতরে ঢুকে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা খুলে নিয়ে এতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভবনের সামনে থাকা সাইনবোর্ড ভেঙেও আগুন ধরিয়ে দেয়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিস্থিতিটিকে ‘গভীরভাবে দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং অন্যান্য দেশের দূতাবাসগুলোতেও অতিরিক্ত নিরাপত্তা মোতায়েন ঘোষণা করেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরেরর ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। কোনো অবস্থাতেই কূটনৈতিক ও কনস্যুলার সম্পত্তি লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়।”
আপনার মন্তব্য লিখুন