দিনাজপুরে শেখ হাসিনা ও ইকবালুর রহিমসহ ৫৯ জনের নামে মামলা
দিনাজপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর হামলা ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিমসহ ৫৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) কোতয়ালী থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন দিনাজপুর সদর উপজেলার রাজবাটি এলাকার এবিএম সিদ্দিকের ছেলে মো. ফাহিম ফয়সাল।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালী থানার ওসি মো. ফরিদ হোসেন।
মামলায় আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদ সরকার, সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মোহাম্মদ শাহ আলম, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, পৌর যুবলীগের নোওশাদ ইকবাল কলিংশ, আওয়ামী লীগ নেতা বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চন, শহর যুবলীগের সভাপতি রমজান, নয়নপুর এলাকার রেজাউল করিম রেজাসহ ৫৯ জন। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে। মামলা নং-২৫/৫৬৯।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৪ আগস্ট আনুমানিক দুপুর ১২টা থেকে ১টায় দিনাজপুর শহরের জেনারেল হাসপাতাল মোড়ে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনগণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে থাকে। এ সময় আওয়ামী সন্ত্রাসী ও ক্যাডার বাহিনীর দুস্কৃতিকারীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আগ্নেয়াস্ত্র এবং দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ আন্দোলনকারীদের উপর চড়াও হয়। এ সময় বাদী ফাহিম ফয়সালসহ ৩০/৪০জন ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনগণ গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আহতদের দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ও আমার (ফাহিম ফয়সাল) শরীর হতে একাধিক গুলি বের করা হয়।
কোতয়ালী থানার ওসি মো. ফরিদ হোসেন জানান, মামলার তদন্তভার এসআই মো. নুর আলমকে দেয়া হয়েছে।
রাজশাহীতে শেখ হাসিনাসহ ১৭৮ জনের নামে হত্যা মামলা
স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে রাজশাহীর পুঠিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন মোসা. মাছুফা নামের এক নারী। মামলায় আসামি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালসহ ১৭৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আরও ২৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে পুঠিয়া থানায় তিনি এ মামলা করেন। মামলার বাদী মাছুফার বাড়ি চারঘাট উপজেলার মাড়িয়া গ্রামে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ সালের ১ মে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে গণতন্ত্ররক্ষা দিবস উপলক্ষে ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের হামলা ও গুলি বর্ষণে বিএনপির সমর্থক মজির উদ্দিন নিহত হন। পরে পুঠিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ মামলা গ্রহণ না করে তাদের ফিরিয়ে দেয়।
নিহত মজির উদ্দিনের ছেলে মাসুদ রানা জানান, ওই সময় তাদের মামলা গ্রহণ করা হয়নি। ঘটনা ভিন্নখাতে নেওয়া হয়েছিল। বর্তমান সরকারের অধীনে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় তারা মামলাটি দায়ের করলেন।
পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত করমকর্তা (ওসি) কবির হোসেন জানান, মামলার এজাহার গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ওই ঘটনায় মজির উদ্দিনকে হত্যা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছিল। এ মামলায় বিভিন্ন সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও নিহত মজিরের ভাতিজা আবু সাঈদ চাঁদও এই মামলায় জেল খেটেছেন। বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন।
সেদিনের ঘটনায় বুধবার রাতে মাছুফার সঙ্গে আবু সাঈদ চাঁদও থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন। তবে একই ঘটনা এবং দুইজনের মামলার এজাহারে আসামি হিসেবে একই ব্যক্তিদের নাম লেখার কারণে একটি মামলা রেকর্ড হয়েছে। চাঁদের এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি।
শেখ হাসিনা-ডিপজলসহ ১৩৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরও একটি হত্যা মামলা হয়েছে। এবার তার সঙ্গে আসামি করা হয়েছে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন, অভিনেতা ও ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন ডিপজলসহ ১৩৮ জনকে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় গুলি করে শুভ নামে এক যুবককে হত্যার অভিযোগে সোমবার এই মামালা করেন ভিকটিমের মা রেনু। মামলাটি গ্রহণ করে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খান কামাল, মাইনুল হোসেন খান নিখিল, কামাল আহমেদ মজুমদার, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাদেক খান, ফেরদৌস আহমেদ, গাজী মেজবাউল হক সাচ্চু, সাবিনা আক্তার তুহিন, নূর আলম সিদ্দিকীর ছেলে তাহজীব আলম সিদ্দিকী, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়াল, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাবেক প্রেসিডেন্ট এনামুলক হক খান দোলন।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই ধানমন্ডি থানাধীন ৩ নম্বর রোডে গুলিবিদ্ধ হন শুভ। পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
গাজীপুরে শেখ হাসিনাসহ ১৫৫ জনের নামে হত্যা মামলা
গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে স্বামীকে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ও এক সাবেক আইজিপি এবং আওয়ামী লীগের ১৫৫ জনের নাম উল্লেখ করে বাসন থানায় আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরোও ১৫০-২০০ জন আসামি করা হয়েছে। নিহত নজরুল ইসলামের (৩২) স্ত্রী মোছাঃ পূর্নিমা বেগম বাদি হয়ে বুধবার (২৮ আগস্ট) জিএমপির বাসন থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এই মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী টুসি, সাবেক এমপি আখতারউজ্জামান, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক আতাউল্যাহ মন্ডল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, আওয়ামীলীগ নেতা মতিউর রহমান মতি, আসাদুর রহমান কিরণ, আফজাল হোসেন সরকার রিপন, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহবায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেলসহ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও সিটি কর্পোরেশনের কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে আসামি করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানহগরীর বাসন থানার চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার শাহাবুদ্দিন মন্ডলের বাসায় ভাড়া থাকতেন নজরুল ইসলাম (৩২)। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানার বারইভাগ এলাকার মো. জামাল শেখের ছেলে। গত ২০ জুলাই বেলা ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে নজরুল ইসলাম ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পূর্ব পাশে বাসন থানাধীন চান্দনা এলাকায় পশমী সোয়েটার গার্মেন্টসের পাঁকা রাস্তার উপর এসে সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলাকালে মামলার প্রথম ১৬ জন আসামির নির্দেশে অন্য আসামিরা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করে। এসময় তারা হত্যার উদ্দেশ্যে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়িভাবে গুলি ছুড়িতে থাকে। এতে পিঠের ডান পাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান নজরুল ইসলাম। পরে নিহতের লাশ সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানাধীন বারইবাগ গ্রামে নিয়ে দাফন করা হয়।
নরসিংদীতে শেখ হাসিনাসহ ৩৫০ জনের নামে হত্যা মামলা
নরসিংদীর মাধবদীতে টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিক জামান মিয়া (১৭) নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এই মামলায় আরও ৩০০ থেকে ৩৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
রবিবার (২৬ আগস্ট) নিহত জামান মিয়ার ভগ্নিপতি মো. আঙ্গুর মিয়া নরসিংদীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল হকের আদালতে মামলার আবেদন করেন। এই সময় আদালতের বিচারক পুলিশকে মামলাটি তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ দেন। নিহত জামান মিয়া ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার দেউলডাংরা এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে। নরসিংদীর মাধবদীর ভগিরথপুর এলাকায় থেকে স্থানীয় একটি টেক্সটাইল কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২১ জুলাই সদর উপজেলার মাধবদীর মেহেরপাড়ার পৌলানপুর এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়ে তৎকালীন সরকারের দমন পীড়ন ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান চলছিল। দুপুর সাড়ে ১২টায় আওয়ামী লীগের ৩০০ থেকে ৩৫০ নেতাকর্মী হাতে লাঠিসোঁটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও এলোপাতাড়িভাবে গুলিবর্ষণ করে। এসময় তাদের ছোড়া একাধিক গুলি জামান মিয়ার পেটসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিদ্ধ হয়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। পাঁচ দিন পর গত ২৫ জুলাই সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল পৌনে ৯টার দিকে জামানের মৃত্যু হয়।
মামলার আরজিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খান কামাল শক্ত হাতে ছাত্রদের আন্দোলন দমনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাদের পরোক্ষ সহযোগিতা, উসকানিমূলক বক্তব্য ও হুকুমে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের অজ্ঞাতনামা আসামিরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে জামানকে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে পেনাল কোডের ১৪৩ / ১৪৯ / ৩০২ / ১০৯ / ৩৪ ধারার অপরাধ করেছেন। তাদের নির্দেশেই ছাত্র-জনতার যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা একযোগে পিটিয়ে ও গুলিবিদ্ধ করে শিক্ষার্থীদের হত্যা ও আহত করেছিলেন।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, আদালত মামলাটি তালিকভুক্ত করতে মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা ৩০০ থেকে ৩৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২২ আগষ্ট আজিজুল হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ৮১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত নামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে নরসিংদী আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এবার সাংবাদিক হত্যায় শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাংবাদিক তাহির জামান নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও সাতজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় মামলাটি দায়ের করেন নিহত সাংবাদিকের মা।
মামলায় অন্যান্য আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, রমনা বিভাগের পুলিশের ডিসি আশরাফ ইমাম, এডিসি প্রশাসন ও নিউমার্কেট জোন হাফিজ আল আসাদ, সহকারী কমিশনার নিউমার্কেট জোন রেফাতুল ইসলাম রিফাত ও নিউমার্কেট থানার সাবেক ওসি মো. আমিনুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ জুলাই তাহির রাজধানীর সাইন্স ল্যাবরেটরী এলাকায় আন্দোলনে অংশ নিতে যান। এ সময় ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ্য করে পুলিশ গুলি ছোঁড়ে। ঘটনার একপর্যায়ে একজন ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের কয়েক ফুট দূরত্বে তাহিরের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। আসামিরা অনবরত গুলি ছুঁড়তে থাকায় তাহিরের মরদেহ হাসপাতালে নেয়াও সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, নিহত তাহের হোসেন দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের সাবেক ভিডিও জার্নালিস্ট ছিলেন। মাস ছয়েক আগে চাকরি ছাড়েন তিনি। গত ১৯ জুলাই আন্দোলন চলাকালে ধানমন্ডির সেন্ট্রাল রোডে সংঘর্ষে নিহত হন তিনি।
গার্মেন্টসকর্মীকে হত্যা, শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় রাজধানীর আদাবরে ছাত্র-জনতার মিছিলে গার্মেন্টসকর্মী সোহেল রানাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) নিহত সোহেলের ভাই ইব্রাহীম ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিনের আদালতে এ মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ঢাকার আদাবর থানা পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের আদেশ দেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম খান নিখিল, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান, সাবেক ডিবি প্রধান হারন অর রশিদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ভিকটিম পেশায় একজন গার্মেন্টসকর্মী। দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আদাবর থানা এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলছিল। সেসময় স্বৈরশাসকের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী পুলিশ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী তথা আসামিরা এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। ভিকটিমসহ ঘটনাস্থলে আসামিদের গুলিতে একাধিক নিহত ও অনেকেই আহত হন। এসময় গুলিবিদ্ধ হলে ভিকটিম সোহেল রানাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শাপলা চত্বরে গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের সমাবেশে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে গণহত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে।
রবিবার (১৮ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকী-আল ফারাবীর আদালতে এ মামলার আবেদন করেন বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পরে আদেশের জন্য রেখেছেন।
ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর প্রতিবাদ জানাতে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামী সমাবেশ ডাকে। পরে তারা সেখানে অবস্থানের ঘোষণা দেয়। রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
ওই রাতে নৃশংস অভিযানে বহু লোককে হত্যার অভিযোগ করে হেফাজত। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের ভাষ্যমতে, ৬১ জন লোক সেদিন মারা যায়। যদিও সেই প্রতিবেদনের কারণে অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল। আদিলুর রহমান খান বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা।
রংপুরে শেখ হাসিনা-ওবায়দুল কাদেরের নামে হত্যা মামলা
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকসের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ-আল তাহির হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৩০০ জনকে।
রবিবার দুপুরে মামলাটি রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি আমলি আদালতে নিহত তাহিরের বাবা আব্দুর রহমান বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত তাহির রংপুর নগরীর বাসিন্দা।
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক
রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার উত্তম পাল, এডিসি (অপরাধ) উৎপল কুমার রায়, এডিসি (ডিবি) নুর ইসলাম পাটোয়ারী, কোতোয়ালি থানার ওসি মোন্তাছের বিল্লাহ, রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছায়াদাত হোসেন বকুল, যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুল
রংপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক , সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক প্রামাণিক, রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাফিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাছিমা জামান ববি, রংপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলামসহ রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৪০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৩০০ জন। মামলার বাদী আব্দুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) সিটি বাজারের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয় এতে গুলিতে নিহত হন আবদুল্লাহ আল তাহির।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের তদন্ত শুরু
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে অভিযোগকারী আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তদন্ত সংস্থা বুধবার রাত থেকে তদন্ত শুরু করেছে।
অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার অভিযোগ
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় দায়ের করা হয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত আরিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা মো. বুলবুল কবিরের পক্ষে বুধবার (১৪ আগস্ট) আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।
আবেদনে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘটনার তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া এ সময়ে আহত হয়ে পরবর্তীতে বিভিন্ন তারিখে নিহতরা এর আওতায় থাকবে।
আবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং তৎকালীন সরকারের কতিপয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও কতিপয় অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ ও কতিপয় অসাধু র্যাব কর্মকর্তা ও সদস্যসহ অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মী, সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সংগঠনসমূহের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
অপরাধের ধরণে বলা হয়েছে, এক থেকে ৯ নম্বর আসামির নির্দেশে ও পরিকল্পনায় অন্যান্য আসামিরা দেশীয় এবং আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে তাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘঠনের অপরাধ।