মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের জেরে দেশটি থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন আরও ১১৪ জন। তাঁদের মধ্যে আছেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য, সেনাসদস্য ও সরকারি কর্মকর্তা।
উখিয়ার রহমতের বিল এলাকার আধা কিলোমিটার পূর্বে মিয়ানমারের সীমান্ত ঢেঁকিবনিয়া। মঙ্গলবার দুপুরে রহমতের বিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখেমুখে আতঙ্ক। অনেকে ঘর ছেড়ে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন।
একই অবস্থা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায়। দিনের মতো রাতেও গুলি বর্ষণ হওয়ায় নির্ঘুম রাত কাটছে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের।
এদিকে মঙ্গলবার উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের রহমতের বিল সীমান্ত এলাকা দিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আরও ১৪৯ জন সদস্য ঢুকে পড়েছেন। পরে তাঁরা আত্মসমর্পণ করে অস্ত্র জমা দেন।
উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, কিছুক্ষণ পরপর গুলি শব্দ। এলাকার লোকজন আতঙ্কে আছেন। অনেকের বাড়িঘরে এসে গুলি পড়ছে। নিরাপত্তার জন্য তাঁদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া উচিত।
মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি ঘিরে রাতভর মর্টার শেল ও গোলাবর্ষণে কেঁপে উঠছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার অন্তত ১৩টি গ্রাম। সোমবার রাত নয়টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত অনবরত এই গোলাবর্ষণ ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ফলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের মধ্যমপাড়া, জলপাইতলী, মণ্ডলপাড়া, নয়াপাড়া, কোনারপাড়া, পশ্চিমকুল, বেতবুনিয়া বাজার পাড়া এবং উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের উখিয়ার ঘাট, পূর্ব ফাঁড়ির বিল, নলবনিয়া, আঞ্জুমান পাড়া, বালুখালী, দক্ষিণ বালুখালী এলাকা কেঁপে ওঠে।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের জেরে দেশটি থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন আরও ১৪৯ জন। তাঁদের মধ্যে মিয়ানমারের সেনাসদস্য, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন। এ নিয়ে গত রবিবার থেকে দেশটির মোট ২৬৪ জন পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। এঁদের বেশির ভাগ বিজিপির সদস্য।
রামু সেক্টর সদর দপ্তরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. মেহেদি হোসাইন কবির সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের ভেতরে যাতে প্রাণহানি না ঘটে, সে জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত যাঁরা এসেছেন, তাঁরা বর্ডার গার্ড পুলিশের অ্যাসোসিয়েটেড। ভাষাগত ও অন্যান্য সমস্যার কারণে এর বাইরে আমরা পরিচয় বের করতে পারিনি।’ এলাকাবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, নিরাপদে থাকবেন। এই মুহূর্তে প্রয়োজন না হলে সীমান্তের কাছাকাছি যাবেন না।
মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলে বাংলাদেশি নিহত
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুমে সীমান্তে মিয়ানমারের ছোড়া মর্টারশেল বিস্ফোরণে দুইজন নিহত হয়েছন।
সোমবার (৫ জানুয়ারি) আড়াইটার দিকে ঘুমধুমে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জলপাইতলী এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে একজন হোসনেয়ারা (৪৫) নামে বাংলাদেশি নারী। ঘুমধুম ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জলপাইতলী এলাকায় বাদশা মিয়ার স্ত্রী। আপরজন অজ্ঞাত এক রোহিঙ্গা শ্রমিক (৫৫)। রোহিঙ্গা শ্রমিকের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য খালেদ বেগম তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, আজ কাজ শেষে দুপুরে দিনমজুরি রোহিঙ্গাকে খাবার দিতে গেলে হঠাৎ করে ওপার থেকে মিয়ানমার ছোঁড়া মর্টারশেল ঘরের ভেতরে এসে পড়ে। এ সময় মর্টারশেল বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে রোহিঙ্গা শ্রমিক মারা যান। আহত হন হোসনেয়ারা। পরে তাকে উদ্ধার করে এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলে দুইজন নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম যাচ্ছে। পরে বিস্তারিত বলা যাবে।
এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি’র সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘর্ষ চলছে। রোববার সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত ২টা পর্যন্ত কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়েনের ধামনখালী সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তরের ঢেঁকিবুনিয়া এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলি ও বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এতে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন।
আরকান আর্মির সঙ্গে চলমান সংঘাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫ জন। সোমবার সকাল পৌনে ৮টায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার বিজিপি’র সদস্যের মধ্যে ১৫ জনের বেশি আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশংকাজনক। তারা কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে সোমবার ভোর পর্যন্ত নতুন করে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২৭ জনের কতজন আহত তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আপনার মন্তব্য লিখুন