হামলার বীভৎসতা এখনও ভুলতে পারছেন না প্রত্যক্ষদর্শীরা। চোখের সামনে বুকারজয়ী সাহিত্যিকের উপরে এইরকম হামলায় রীতিমতো আতঙ্কিত তারাও।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, লেখক মঞ্চে ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই আচমকা এক যুবকও উঠে পড়ে। প্রথমে অনেকেই ভেবেছিলেন অনুষ্ঠানের আয়োজকদের মধ্যে কেউ হবেন হয়তো ওই ব্যক্তি। কিন্তু নিমেষেই সেই ভুল ধারণা ভেঙে যায়।
হামলাকারী ক্রমাগত ছুরির কোপ বসাচ্ছিলেন
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য মতে, হামলাকারী যুবক রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়েছেন বছর ৭৫-র লেখকের ওপরে। হাত ধরা ছুরি দিয়ে একের পর এক কোপ বসিয়ে যাচ্ছে ঘাড়ে-গলায় ও পেটে। মঞ্চে উপস্থিত আয়োজকরাই সঙ্গে সঙ্গে ধরে ফেলে ওই হামলাকারীকে। টেনে হিচড়ে তাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ততক্ষণে মঞ্চ ভাসছে রক্তে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রয়েছেন সালমান রুশদি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মাত্র ২০ সেকেন্ডের মধ্যেই রুশদির শরীরে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫টি কোপ মারা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, লেখককে আহত করার লক্ষ্যে নয়, খুন করার জন্যই ওইরকম নৃশংসভাবে কোপানো হয়েছে তাকে। হামলাকারী যন্ত্রচালিত পুতুলের মতো কোনওদিকে না তাকিয়ে ক্রমাগত ছুরির কোপ বসাচ্ছিলেন রুশদির শরীরে।
কথা বলতে পারছেন না রুশদি, হারাতে পারেন এক চোখ
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ব্রিটিশ ভারতীয় ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক সালমান রুশদির ওপর হামলার পর বর্তমানে তিনি ভেন্টিলেটর সাপোর্টে আছেন এবং কথা বলতে পারছেন না।
সালমান রুশদির কর্মকর্তা অ্যান্ড্রু ওয়াইলি বলেছেন, ‘সালমান রুশদির অবস্থা তেমন একটা ভালো না। তিনি এক চোখ হারাতে পারেন। তার বাহুতে থাকা স্নায়ুগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। ছুরিকাঘাতে তার লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
ঘাড়ের ডান দিকে আঘাত করা হয় সালমান রুশদিকে: চিকিৎসক
শিটোকোয়া ইনস্টিটিউটিশনে সালমান রুশদীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হামলার পরপরই তাকে সেখানে নেওয়া হয়। রিটা ল্যান্ডম্যান নামে এক চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আছে তিনি।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, তার শরীরে তিনি কয়েকটি ছুরিকাঘাত দেখেছেন। এর মধ্যে একটি আঘাত ছিল ঘাড়ের ডান দিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘‘মঞ্চে তার শরীরের নীচে অনেক রক্ত জমে ছিল। রিটা ল্যান্ডম্যান নামের এই চিকিৎসক বলেন, ‘লোকজন চিৎকার করে বলছিল, এখনো তার পালস পাওয়া যাচ্ছে, পালস পাওয়া যাচ্ছে।’’
হামলাকারীকে আটক করেছে পুলিশ
হামলার পরই নিউইয়র্ক স্টেট পুলিশের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়,”অনুষ্ঠান শুরু হতেই সালমান রুশদি যখন পরিচয়পর্ব সারছিলেন, সেইসময়ই সন্দেহভাজন এক ব্যক্তি আচমকাই নিরাপত্তারক্ষীদের টপকে মঞ্চে উঠে পড়ে এবং সলমন রুশদির ওপরে হামলা চালায়। রুশদির ঘাড়ে গুরুতর আঘাত লেগেছে। তাকে সঙ্গে সঙ্গেই এয়ারলিফ্ট করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
‘হামলাকারী এখন পুলিশ হেফাজতে আছে। হামলার ঘটনায় নিউ জার্সির ফেয়ারভিউ থেকে হাদি মাতার (২৪) নামে এক সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে।তবে কী কারণে এই হামলা চালিয়েছেন সে সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।’
সালমান রুশদী ১৯৮৮ সালে তার ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বইটি প্রকাশের পর থেকে অব্যাহতভাবে মৃত্যু হুমকির মুখে আছেন। অনেক মুসলিম এই বইটিতে তাদের ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করেন।
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশিত হওয়ার পর প্রায় নয় বছর তাকে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল। এরপর বইটি অনেক দেশে নিষিদ্ধ করা হয়।
বইটি প্রকাশিত হওয়ার এক বছর পর ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি সালমান রুশদিকে হত্যার ডাক দেন এবং এজন্যে ৩০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেন। এই বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন দেশে যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, তাতে ৫৯ জন মানুষ নিহত হয়।
সালমান রুশদী ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার একজন সরব প্রবক্তা।
আপনার মন্তব্য লিখুন