জায় চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলের পরাজয় একেবারেই সন্নিকটে বলে মন্তব্য করেছেন পোল্যান্ডের ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ইতিহাসের গবেষক হ্যাগি ওলশানিতস্কি। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ব্যর্থতার কারণেই এই পরাজয় আসন্ন। গাজা যুদ্ধে লক্ষ্য অর্জনে ইসরায়েল ব্যর্থ হচ্ছে এবং এ কারণে নেতানিয়াহু গাজায় লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ওলশানিতস্কি উল্লেখ করেন, ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে ইসরায়েল তার শত্রুকে ঠেকানোর সব শক্তি ব্যয় করে ফেলেছে এবং বর্তমানে তাদের আর কোনো বর্ধিত শক্তি নেই। তিনি লিখেছেন, অতীতে ইসরায়েল যে বিজয় অর্জন করত, সেগুলোর এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই।
ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা দক্ষিণ আফ্রিকার ৩০ বছরের বর্ণবাদী শাসনে নিহত কৃষ্ণকায় নাগরিকদের সংখ্যার চেয়েও বেশি। অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইহুদিদের দ্বারা ফিলিস্তিনিদের ওপর হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ নতুন একটি যুদ্ধের আগুন উসকে দিচ্ছে বলে ওলশানিতস্কি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষক আরও বলেন, নেতানিয়াহু বিচার বিভাগসহ ইসরায়েলের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন, যেন গাজা যুদ্ধে ব্যর্থতার জন্য তাকে কারাগারে যেতে না হয়। আসলে ক্ষমতালোভী নেতানিয়াহু ক্ষমতা হারানোর ভয়ে গাজা যুদ্ধের ইতি টানছেন না।
ওলশানিতস্কি ইসরায়েলকে রক্ষার একটি ক্ষুদ্র সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন, তা হলো গাজায় যুদ্ধের আগুন থামানো। তিনি বলেন, ইসরায়েলের চূড়ান্ত পরাজয়ের আগে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়।
ইসরায়েল হবে বাইডেনের ভিয়েতনাম: বার্নি স্যান্ডার্স
ইসরায়েল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দেশের ৪৬ অঙ্গরাজ্যের ১৪০টি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে সমর্থন দিয়েছেন দেশটির ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স।
তার মতে, ইসরায়েল হতে পারে বাইডেনের ভিয়েতনাম।
তিনি এক সাক্ষাৎকারে বাইডেনের তুলনা করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের সাথে, যিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ে শিক্ষার্থী-বিক্ষোভের জেরে ১৯৬৮ সালে পুনর্নিবাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এবার ইসরায়েল নিয়েও নিজের অবস্থানের জন্য যুব সম্প্রদায় ও ডেমোক্র্যাটদের বড় অংশের সমর্থন খুইয়ে বাইডেন হেরে যেতে পারেন আগামী নভেম্বর মাসের নির্বাচনে। এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স।
আমেরিকাজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ ক্রমেই আরও জোরদার হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে, ইসরায়েল নিয়ে ঢেঁকি গেলার মতো অবস্থায় পড়েছেন জো বাইডেন। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে পথে নামছেন মার্কিন শিক্ষার্থীরা। শাস্তির মুখে পড়েও পিছু হটছেন না তারা।
এদিকে, শাস্তির মুখে পড়া ওই সব শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ব্যবস্থা দেবে বলে বার্তা দিয়েছে ইয়েমেনভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথি। শিক্ষার্থী-বিক্ষোভ এবং ভিন দেশের যুদ্ধে প্রচুর খরচের প্রশ্নে নির্বাচনের আগে সব মিলিয়ে বেশ বিপাকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
হুথি পরিচালিত সানা ইউনিভার্সিটির এক কর্মকর্তা বলেন, “ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়ে আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন যারা, তাদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছি। ফিলিস্তিনের পাশে এই লড়াইয়ে যত রকমভাবে থাকা সম্ভব, আমরা রয়েছি।” নির্দিষ্ট ইমেল-ঠিকানা দিয়ে সানা ইউনিভার্সিটির সাথে যোগাযোগ করার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইল-হামাস সংঘাত শুরুর হওয়ার পরই সরাসরি ফিলিস্তিনের হামাসের পাশে দাঁড়ায় পশ্চিম এশিয়ার বেশ কয়েকটি সশস্ত্র সংগঠন। তার মধ্যে ইয়েমেনের হুথি অন্যতম। তারা লোহিত সাগরের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক নৌপথে হামলা শুরু করে। গত কয়েক সপ্তাহে আমেরিকার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে দু’হাজার চার শতাধিক বিক্ষোভকারী গ্রেফতার হয়েছে।
আর্মেনিয়ার ও আজারবাইজান মধ্যে সম্পর্ক তৈরিতে সহায়তার প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের
সাবেক দুই সোভিয়েত রাষ্ট্র আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার মধ্যে সম্পর্ক তৈরিতে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির দুই বছর পর সম্পর্ক চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এই প্রস্তাব দিলেন।
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট এবং আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে পৃথক টেলিফোনে ব্লিনকেন বলেন, অঞ্চলটিতে দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক সুযোগ রয়েছে। আঞ্চলিক পরিবহন এবং যোগাযোগ সংযোগে সহায়তার প্রস্তাব দেন ব্লিনকেন।
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ এবং আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী পাশিনিয়ান গত মে মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় ভবিষ্যত শান্তি আলোচনার জন্য সাক্ষাতে বসেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দুই দেশ ৬ সপ্তাহের যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
এই যুদ্ধে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। রাশিয়া-তুরস্কের মধ্যস্থতায় আর্মেনিয়া কয়েক দশক ধরে রাখা উপত্যকা নাগোর্নো কারাবাখ ছেড়ে দিতে রাজি হয়।
সূত্র: ফ্রান্স২৪
আপনার মন্তব্য লিখুন