গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধে বিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সে প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবেই দেখার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে ইসরায়েলের দুই কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, নেতানিয়াহু এই প্রস্তাবে রাজি হলে তারা ছোট ছাড়বেন তো ছাড়বেন, জোট ভেঙেই দেবেন।
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিস ও জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বলেন, হামাসকে ধ্বংস করার আগে যেকোনো চুক্তি ইসরায়েলের স্বার্থবিরোধী। এ ধরনের কোনো চুক্তি আমরা মেনে নেব না।
ইসরায়েলের বিরোধী জোট অবশ্য বিপরীত অবস্থান নিয়েছে। বিরোধী নেতা ইয়ার ল্যাপিড বলেছেন, যুদ্ধবিরোধী এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করলে ক্ষমতাসীন নেতানিয়াহু সরকারকে ববং তারা সমর্থন দেবেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, গাজায় যুদ্ধবিরতি না করার বিষয়ে সম্পূর্ণ কঠোর অবস্থানে ছিল ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এর আগে বলেছিলেন, হামাসের শাসন ও সামরিক ক্ষমতা ধ্বংস না করা এবং সব জিম্মিকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত কোনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে তারা যাবেন না। তবে বাইডেনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সবকিছু নতুন রূপ দিচ্ছে।
বাইডেনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শুরু হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজার জনবহুল এলাকা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করবে। পরে সব জিম্মিদের মুক্তি, স্থায়ী শত্রুতার অবসান ও ব্যাপকভাবে গাজা পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে এই প্রস্তাবনায়।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই প্রস্তাবের পর শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে অর্থমন্ত্রী স্মোট্রিস লিখেছেন, তিনি নেতানিয়াহুকে বলেছেন যে হামাসকে ধ্বংস করা ও সব জিম্মিকে ফিরিয়ে না এনে প্রস্তাবিত রূপরেখায় নেতানিয়াহু রাজি হলে সরকারের এই প্রক্রিয়ার অংশ হবেন না তিনি।
জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী বেন-গভিরও একই ধরনের মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এই চুক্তির অর্থ হলো যুদ্ধের সমাপ্তি এবং হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্য থেকে সরে আসা। এই চুক্তি অপরিণামদর্শী। এই চুক্তির অর্থ সন্ত্রাসবাদের বিজয়, যা ইসরায়েল রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এই প্রস্তাবে রাজি হওয়ার বদলে সরকার ভেঙে দেওয়া ভালো।
নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ডানপন্থি জোটের অংশ বেন-গভিরের ওটজমা ইয়েহুডিত (ইহুদি শক্তি) এবং স্মোট্রিসের ধর্মভিত্তিক জায়োনিজম পার্টি। প্রথম দলটির ছয়টি ও দ্বিতীয় দলটির সাতটি আসন রয়েছে সংসদে। অন্যদিকে ইসরায়েলের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিরোধী রাজনীতিবিদদের একজন ইয়ার ল্যাপিড। তার দল ইয়েশ আতিদের আসনসংখ্যা ২৪টি। তাদের দলের অবস্থা বেশ ভালো এবং ইসরায়েলের রাজনীতিতে অনেক সম্ভাবনাময় মনে করা হয়।
বেন-গভির ও স্মোট্রিস সমর্থন তুলে নিলে ল্যাপিড তার দলের সমর্থন নেতানিয়াহুর জন্য বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। ল্যাপিড বলেন, ‘বেন-গভির ও স্মোট্রিস সরকার ছেড়ে দিলে জিম্মি চুক্তির জন্য নেতানিয়াহুর জন্য আমাদের সমর্থন আছে।’
এদিকে বাইডেনের দেওয়া প্রস্তাবে ইসরায়েলি সরকারকে রাজি হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তেল আবিবে কয়েক হাজার মানুষ সমাবেশ করেছেন। তারা এ সময় নেতানিয়াহুর পদত্যাগও দাবি করেছে। এ সময় বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটকও করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইসরায়েলের জোট সরকারের পতন
চার বছরের কম সময়ের মধ্যে ইসরায়েল পঞ্চম সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করতে চলেছে। দেশটির নড়বড়ে জোট সরকার টিকে থাকতে পারবে না বলে নিশ্চিত হওয়ার পর এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যমান চুক্তির আওতায় বিকল্প প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটের স্থলাভিষিক্ত হবেন। অক্টোবরের শেষের দিকে নতুন নির্বাচন হতে পারে বলে রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা বলছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী পদে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন।
নাফতালি বেনেটের জোট সরকার পতনের দ্বারপ্রান্তে বলে কয়েক সপ্তাহের জল্পনা-কল্পনার পর সোমবারের ঘোষণা এল। বেনেট-লাপিদ সরকার ছিল ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বিচিত্রধর্মী জোট।
নাফতালি বেনেটের নিজের ডানপন্থী ইয়ামিনা পার্টির একজন সদস্য জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে আগামী সপ্তাহে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভোটে হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছিল। ওই আইনপ্রণেতার পক্ষত্যাগে সরকার ১২০ আসনের পার্লামেন্টে (নেসেট) সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জোটকে স্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, নেসেটের অনুমোদনের জন্য আগামী সপ্তাহে একটি বিল উত্থাপন করা হবে।
সোমবার রাতে সরকারের এ ঘোষণায় অন্য নেতারা বিস্মিত হয়েছেন। টাইমস অব ইসরায়েল একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে, প্রতিরক্ষা বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেউই এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতেন না।
ইসরায়েলে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা নেতা কট্টরপন্থী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর এক বছরের কিছু বেশি সময় আগে এই দুই নেতা জোট গঠন করেছিলেন। জোটটি নানা রাজনৈতিক মতের আটটি দল নিয়ে গঠিত হয়েছিল। শুধুমাত্র নেতানিয়াহুর সরকারে আসা ঠেকাতেই এক জোট হয়েছিল তারা।
আপনার মন্তব্য লিখুন