সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ‘আর্থিক অভ্যুত্থানের’ চেষ্টা করছে মালদ্বীপের বিরোধী দলগুলো। এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু।
মালদ্বীপের স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড থেকে বিদেশি লেনদেন স্থগিত করার ঘোষণা দেয় মালদ্বীপের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বিএমএল)।
এতে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, মালদ্বীপের ব্যবহারযোগ্য ডলারের রিজার্ভ ফুরিয়ে ‘মাইনাসে’ চলছে। স্বভাবতই এই খবরে দেশটির জনগণের মধ্যে আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে।
আন্তর্জাতিক লেনদেন স্থগিত করা মানে দেশে কোনও রিজার্ভ নেই। এতে বিদেশি বিনিয়োগ থেকে শুরু করে দেশের আমদানি-রফতানি থমকে যায়। তবে কয়েক ঘণ্টা পরই ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড থেকে বিদেশি লেনদেন স্থগিতের সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করে নেয় মালদ্বীপের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই পরিস্থিতিতে নিজ দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেসের (পিএনসি) সঙ্গে বৈঠকে বসেন মোহামেদ মুইজ্জু। তার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার সঙ্গে পরামর্শ না করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
মুইজ্জু এবং তার দল পিএনসি’র নেতাদের দাবি, বিএমএলের ওই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে হাত রয়েছে বিরোধী দলগুলোর। সরকার এই প্রশ্নও তুলেছে যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী।
বিদেশি অপশক্তির সঙ্গে যোগসাজশে সরকার পতন চেষ্টার অভিযোগ এনেছেন মোহামেদ মুইজ্জু। একই সঙ্গে যারা ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে রয়েছেন এবং এভাবে সরকার ফেলার চেষ্টা করছেন, তাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, আর্থিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুইজ্জুকে ক্ষমতাচ্যুত করার অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে মালদ্বীপের পুলিশ।
তবে মালদ্বীপের প্রধান বিরোধী দল মালদ্বীপিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) চেয়ারপারসন ফয়েজ ইসমাইল সরকারের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “অভ্যুত্থান যদি হয়, তা হলে তা সরকারের ভেতর থেকেই হবে এবং এর জন্য দায়ী থাকবে সরকারই। এতে বিরোধীদের কোনও হাত নেই।”
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এএফপি
মালদ্বীপে নির্বাচনে বড় জয় পেল মুইজ্জুর দল
মালদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় পেয়েছে প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জুর দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি)।
রবিবার দেশটিতে সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। প্রায় সাড়ে ৯ ঘণ্টা ভোট গ্রহণ চলে।
রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মালদ্বীপের নির্বাচন কমিশন ৯৩টি আসনের মধ্যে ৮৬টির ফলাফল ঘোষণা করে। এসব আসনের মধ্যে ৬৬টিতে জয় পেয়েছে মুইজ্জুর দল পিএনসি। এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসনের চেয়ে এই সংখ্যা অনেক বেশি। বিদায়ী পার্লামেন্টে পিএনসি ও তাদের শরিকদের মাত্র আটটি আসন ছিল।
রবিবারের নির্বাচনে মুইজ্জুর দলের সঙ্গে মূলত লড়াই ছিল সে দেশের মালদিভিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এমডিপি)-র। ফলাফল থেকেই স্পষ্ট পার্লামেন্ট নির্বাচনে সে ভাবে দাগ কাটতে পারেনি এমডিপি।
মালদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব ছিল আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে। বিশ্বের অনেক দেশের নজর ছিল এই নির্বাচনের দিকে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভারতবিরোধী অবস্থান প্রকাশ করে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সালেহকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন মুইজ্জু। কিন্তু পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখে সালেহ’র দল এমডিপি। ফলে পার্লামেন্টের ‘বাধায়’ বহু সিদ্ধান্তই কার্যকর করতে পারেনি মুইজ্জুর সরকার। তাই এই ভোটে জিতে তারা মালদ্বীপের পার্লামেন্টেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখতে চেয়েছিল।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।
ভারতকে সেনা সরাতে বললেন মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট
প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েই ভারতকে মালদ্বীপ থেকে সেনা প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করেছেন মুহাম্মদ মুইজ্জু। মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি কার্যালয় থেকে জারি করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শনিবার (১৮ নভেম্বর) ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরণ রিজিজুর প্রেসিডেন্ট মইজ্জুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তখন প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে সেনা সরানোর অনুরোধ করেন। বৈঠকে মালদ্বীপের প্রধানমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন।
ভারতীয় পক্ষ বলেছে, উভয় দেশ একটি কার্যকর সমাধান খোঁজার চেষ্টা করবে।
ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রটিতে ভারতের প্রায় ৭০ জন সৈন্য রয়েছে। এছাড়া কিছু রাডার এবং নজরদারি বিমানও রয়েছে মালদ্বীপে। মালদ্বীপের জল সীমানায় ভারতীয় টহল জাহাজও টহল দিয়ে থাকে।
ভারতীয় মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মুইজ্জু মালদ্বীপে মাদক পাচার প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা সহায়তা কাজে ভারতীয় হেলিকপ্টারের অবদান স্বীকার করেছেন।
মালদ্বীপের রাজনীতিতে মোহামেদ মুইজ্জু চীনপন্থি হিসেবে পরিচিত। তিনি নির্বাচনি প্রচার অভিযানে কট্টর ভারতবিরোধী বক্তব্য দিয়েছিলেন। নির্বাচনের আগে তার প্রতিশ্রুতি ছিল, মালদ্বীপে ভারতের প্রভাব খর্ব করার। মালের সাবেক মেয়র মুইজ্জুর স্লোগান ছিল ‘ইন্ডিয়া আউট’।
ভারত মহাসাগরে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশটিতে চীন ও ভারত বরাবরই প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। এবারের নির্বাচনে ভারতপন্থি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সোলিহকে পরাজিত করে চীনপন্থি নেতা মইজ্জু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এতে পাঁচ বছর পর ফের একবার মালেতে বেইজিং ঘেঁষা নেতৃত্ব আসে। প্রেসিডেন্টের শপথ নিয়েই ভারতকে সেনা সরানোর অনুরোধ জানালেন।