বিয়ে রাসুল (সা.)-এর সুন্নত। ইসলামে কোনো নারীকে বিয়ে করলে তাকে অবশ্যই মোহর দিতে হবে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে মানুষকে দেখানোর জন্য কোটি টাকা মোহর ধার্য করতে হবে। মোহর ধার্য করা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, মোহর স্ত্রীর অধিকার।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যদি এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করা স্থির করো এবং তাদের একজনকে অগাধ অর্থও (সম্পদের স্তূপ) দিয়ে থাকো, তবু তা থেকে কিছুই গ্রহণ করো না…। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২০)
এ আয়াত থেকে জানা যায়, কেউ চাইলে স্ত্রীকে মোটা অঙ্কের মোহরানা দিতে পারবেন। কোরআনের অন্য আয়াতে এসেছে, ‘বিত্তবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবন-জীবিকা সীমিত, সে আল্লাহ যা দান করেছেন তা থেকে ব্যয় করবে…। ’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৭)
তার ন্যায্য অধিকার সে যেন সঠিকভাবে পায় এবং নারীর যেন অবমূল্যায়ন না হয় তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। পাশাপাশি মোহর নির্ধারণের সময় স্বামীর আর্থিক অবস্থার প্রতিও লক্ষ্য রাখতে হবে। স্বামীর সামর্থ্যের বাইরে মোহর ধার্য করে তাকে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
মোহরের শরয়ি বিধান হলো, ১০ দিরহামের কম না হওয়া (১০ দিরহামের পরিমাণ বর্তমান হিসাবে পৌনে তিন ভরি খাঁটি রুপা)। পৌনে তিন ভরি খাঁটি রুপার মূল্য যখন যা, মহরের সর্বনিম্ন মূল্যও তখন তা। তবে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোনো নারীকে ঠকানো যাবে না। স্ত্রীর বংশ ও তার সমমানের মেয়েদের মোহরের পরিমাণ বিবেচনা করাও উচিত। মোহরের সর্বোচ্চ কত হবে কোনো পরিমাণ শরিয়ত নির্ধারণ করেনি। (বাদায়েউস সানায়ে : ২/২৭৫, মিরকাতুল মাফাতিহ : ৬/৩৫৮)
কারো সামর্থ্য থাকলে তারা যত খুশি মোহর নির্ধারণ করে বিয়ে করতে পারে। উম্মে হাবিবা (রা.) ছাড়া নবী (সা.)-এর অন্যান্য স্ত্রীর মোহর ছিল ৫০০ দিরহাম, যা প্রচলিত হিসাব অনুযায়ী ১৩১.২৫ ভরি খাঁটি রুপা বা তার সমপরিমাণ বাজারমূল্য। যেহেতু পরিমাণ নির্ধারণে শরিয়ত বিশেষজ্ঞদের ভেতর সামান্য মতবিরোধ রয়েছে, তাই সতর্কতামূলক পূর্ণ ১৫০ ভরি ধরাই ভালো।
উম্মে হাবিবা (রা.)-এর মোহর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পক্ষ থেকে হাবশার বাদশাহ নাজ্জাশি আদায় করেছিলেন ৪০০ দিনার, যা বর্তমান হিসাবে দেড় শ ভরি খাঁটি সোনা, অপর বর্ণনায় ৪০০ দিরহাম রুপা। (মুসলিম, হাদিস : ১৪২৬, তিরমিজি, হাদিস : ১১১৪, আবু দাউদ : ২১০৮, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ১৬৩৮৬)
মোহর শুধু টাকা দিয়েই পরিশোধ করা জরুরি নয়। গয়না, গাড়ি, বাড়ি, জমি, বই-পুস্তক দিয়েও মোহর আদায় করা যায়। ইদানীং মানুষের মাঝে বই পড়ার প্রবণতা বাড়ছে। স্বামীর কাছে মোহর হিসেবে বই চাওয়ার ঘটনাও পৃথিবীতে ঘটেছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, স্ত্রীকে কি আদৌ মোহর হিসেবে বই দেওয়া যাবে? এর উত্তর হলো, স্বামী স্ত্রীকে মোহরের নিয়তে এমন সব বস্তু দিতে পারবে, যা দেওয়া স্বামীর ওপর ওয়াজিব নয়। আমরা অনেক সময় স্ত্রীকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অনেক উপহার দিয়ে থাকি, চাইলে তাও আমরা মোহর হিসেবে গণ্য করতে পারি। এতে একদিকে যেমন স্ত্রীর ইচ্ছা পূরণ হয়ে যাবে, অন্যদিকে তার প্রাপ্য মোহরও আদায় হয়ে যাবে।
কিন্তু ওই জিনিসটি যদি স্ত্রী মোহর হিসেবে গ্রহণ না করতে চায়, তাহলে সে তা ফেরত দিতে পারবে। যেমন: কেউ তার স্ত্রীকে একটি দামি ঘড়ি মোহর হিসেবে গিফট করতে চাইল; কিন্তু স্ত্রীর তা পছন্দ হয়নি বা এই মুহূর্তে প্রয়োজন নেই, তাই সে তা প্রত্যাখ্যান করার অধিকার রাখবে। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৫/২৮)
তাই কোনো স্ত্রী যদি মোহর হিসেবে বই নিতে অনীহা প্রকাশ করে তাকে তা মোহর হিসেবে নেওয়ার জন্য বাধ্য করা যাবে না। কিন্তু তিনি যদি মোহর হিসেবে বই নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে, তবে তাকে মোহর হিসেবে বই দেওয়ার অবকাশ আছে।
আপনার মন্তব্য লিখুন