ভারত সরকারের ‘স্বচ্ছ অভিযান’ (পরিচ্ছন্নতা অভিযান) এর অঙ্গ হিসাবে একটি বিতর্কিত জমি পরিষ্কারকে কেন্দ্র করে বুধবার এই সহিংসতার ঘটনা ঘটে রাজ্যটির উখরুল জেলায়।
উখরুলের হুনফুন ও হাংপাং গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যেই এই সহিংসতার ঘটনা ঘটে। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে স্থায়ী হয় এই সংঘর্ষ। দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। আর তাতেই মৃত্যু হয় তিনজনের। আহত হয় কমপক্ষে ৪০ জন।
নিহতদের মধ্যে একজন মণিপুর রাইফেলসের সদস্য রয়েছেন। ওরিনমি থুম্বরা নামে নিহত ব্যক্তি ৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নের সদস্য, সে লুঙ্ঘর গ্রামের বাসিন্দা।
বাকিরা হলেন রিলেইউং হংগ্রে এবং সিলাস জিংখাই। তারা উভয়েই হুনফুন গ্রামের বাসিন্দা।
বুধবার উখরুল শহরের এনগাফার থেকে থিংরাসা পর্যন্ত বিতর্কিত জমির একটি ফালিতে এই পরিচ্ছন্নতা অভিযানের আয়োজন করেছিল ‘থাওয়াইজাও হুংপুং ইয়ুথ স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন’ (THYSO)। যদিও ওই জায়গায় এই অনুষ্ঠান করা নিয়ে হুনফুন গ্রামের তরফে তীব্র বিরোধিতা করা হয়। কিন্তু সেই বিরোধিতা সত্ত্বেও, ছাত্র সংগঠনটি পরিচ্ছন্নতা অভিযান এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর তাতেই যত বিপত্তি।
ঘটনায় যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়িয়েছে উখরুলে। ওই ঘটনার পর উখরুলে কারফিউ সহ বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি মোবাইল পরিষেবাও সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।
উখরুলের মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট ডি. কামেই জানান, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রামের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির সম্ভাবনা রয়েছে এবং যার ফলে শান্তি ও শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রশাসনের তরফে এক বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, ‘এই ধরনের গোলযোগের ফলে শান্তি লঙ্ঘন হতে পারে এবং মানুষের জীবন ও সম্পত্তির জন্য বিপদ হতে পারে। ওই আদেশে এও বলা হয়েছে, স্থানীয় মানুষজনের বাড়ির বাইরে বেরোনো বা অন্য যেকোনো ধরনের কার্যকলাপ- যেটা জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ব্যাহত করতে পারে। এই আশঙ্কা থেকে পরবর্তী আদেশ না আসা পর্যন্ত তাও সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।
এমন এক পরিস্থিতিতে উখরুল জেলার আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর চেয়ে ১০ সেক্টর আসাম রাইফেলসের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেলকে চিঠি লিখেছেন মহকুমা শাসক ডি. কামেই।
উত্তপ্ত ভারতের মণিপুর, সেনাবাহিনী মোতায়েন
উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারতের মণিপুর রাজ্য। সেখানকার মেতিস গোষ্ঠীকে স্কেজিউলড ট্রাইবে (তফসিলি উপজাতি) অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সহিংসতা দেখা দিয়েছে। সহিংসতা রুখতে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ্যে সেনাবাহিনী ও প্যারামিলিটারি আসাম রাইফেলসকে মোতায়েন করা হয়েছে।
গত মাসে ভারতের মণিপুর রাজ্যে মেতিস গোষ্ঠীর মানুষকে ‘স্কেজিউলড ট্রাইবে’ অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেন আদালত। তবে আদালতের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে প্রদেশের নাগাসম, জোমিস এবং কুর্কি উপজাতিরা।
বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
বুধবার অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন মণিপুর (এটিএসইউএম) ‘উপজাতি সংহতি’ মিছিল করার ঘোষণা দেয়। মেতিস গোষ্ঠীর মানুষ মিছিলে বাধা দিলে এটি সহিংস রূপ ধারণ করে। যা রাজধানী ইম্ফাল, চুরান্দপুর এবং কাংপোকপিতে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে রাজ্যের আটটি বিভাগে রাতে কারফিউ জারি করা হয়।
মণিপুরে যত মানুষ রয়েছেন তার মধ্যে ৫৩ শতাংশই মেতিস গোষ্ঠীর মানুষ। কিন্ত তারা উপজাতি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে বসতি স্থাপন করতে পারেন না। পুরো মণিপুরের মাত্র ১১ শতাংশ স্থানে বিশেষ করে মণিপুর উপত্যকায় বসবাস রয়েছে তাদের।
মেতিস গোষ্ঠীর দাবি, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে অবৈধ অভিবাসীরা আসায় তারা অনেক সমস্যায় পড়ছে। এ কারণে নিজেদের স্কেজিউলড ট্রাইবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছিল তারা।
পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ায় সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন জায়গা থেকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছে। এছাড়া রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছেন সেনা সদস্যরা। ৭ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষকে ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর অবকাঠামোয় আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
সেনাবাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও রাজধানী ইম্ফালে বুধবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায় বিভিন্ন দোকানপাট ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বুধবার মণিপুরের মুখ্যমন্ত্র সিংয়ের সঙ্গে কথা বলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোতে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের (আরএএফ) সদস্যদের পাঠানো হয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি
আপনার মন্তব্য লিখুন